২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী অপারেটর

নিরাপত্তায় নজর রাখতে হবে

-

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে কনটেইনার টার্মিনালের ব্যবস্থাপনায় বিদেশী অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে। গত ১০ জুন থেকে সৌদি আরবের একটি কোম্পানি বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে (পিসিটি) অপারেশন শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো টার্মিনাল পরিচালনায় এই প্রথম কোনো বিদেশী অপারেটর যুক্ত হলো।
এটি ঠিক যে, বিশ্বের কোনো বড় বন্দরই শতভাগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় না। সব বন্দরই পরিচালিত হয় ল্যান্ডলর্ড পোর্ট হিসেবে, অর্থাৎ বন্দরের বেশির ভাগ কাজ চলে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। সরকার শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা পালন করে।
এতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার ব্যয় ৯ শতাংশ কমবে এবং ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা বাড়বে ৭ শতাংশ। এগুলো বিশ্বব্যাংকের হিসাব; কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এ দেশে দুর্নীতির শিকড় সমাজের এতটাই গভীরে যে, বিদেশী অপারেটরও এর আওতামুক্ত থাকবে এমন ভরসা করা যায় না। আর নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকারের ভূমিকা দেশের স্বার্থের অনুকূলে থাকবে এমন আশাও করা যায় না। যদি তেমন আশা করা যেত তাহলে গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতির এমন দুর্দশা হতো না। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট। নিছক শৃঙ্খলার অভাবে আমাদের ব্যাংক খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেÑ এটি সবার জানা। বিদেশী কোম্পানি আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির যে চুক্তি সরকার করেছে তা আগাগোড়াই দেশের স্বার্থের বিপক্ষে গেছে এমন সমালোচনা আছে। এমন আরো অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে বিদ্যমান। সে কারণেই কোনো খাতে বিদেশী অপারেটর নিয়োগের প্রশ্ন এলে আমাদের মনে সংশয় জাগে।

আবার বিশ্বব্যাংকের সব পরামর্শ যে আমাদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে এমন নয়। একসময় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস ছিল পাটশিল্প। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনে নেয়ায় সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহারে বিদেশী অপারেটর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে লজিস্টিকস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিভিন্ন শিল্পনগরী গড়ে উঠছে। অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এগুলোতে উৎপাদন শুরু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কয়েকগুণ বাড়বে। তাই এখন থেকেই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রতিষ্ঠিত বিদেশী অপারেটর নিয়োগ অন্যতম বিকল্প। এতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। দক্ষতাও বাড়বে। স্থানীয় বেসরকারি অপারেটররাও এগিয়ে আসতে পারেন। তবে বন্দর ব্যবস্থাপনা শতভাগ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হবে এমনটি চান না অনেকেই। যদিও দেশের বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের বড় অংশ এর পক্ষে। তবে এর সাথে নিরাপত্তার ইস্যু জড়িত। অনেকেই এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছেন। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা সরকারি খাতে বন্দর পরিচালনার বিরোধী নই। দুর্নীতিমুক্ত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে সরকারি ব্যবস্থাপনাই উত্তম মনে করি; কিন্তু দুর্নীতি রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান অদক্ষ শাসক, প্রশাসকদের অধীনে সেটি অসম্ভব বলেই মনে হয়। তাই সবদিক বিবেচনায় বন্দর ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সুনাম আছে, এমন বিদেশী অপারেটরকে দায়িত্ব দেয়াই যুক্তিযুক্ত।


আরো সংবাদ



premium cement