২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত কোরবানি

ঘুুচুক মনের কালিমা

-

মুসলিম জাহানের সাথে ঈদুল আজহা আর কোরবানি নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আগামীকাল সোমবার দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করা হবে। আল্লাহপ্রেমের পরম নিদর্শন বায়তুল্লাহর হজ আর তাঁর রাহে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের বিধান হিসেবে কোরবানি বিশ্বাসীর ইহজাগতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য দিক। আল্লাহ দুনিয়ায় মানবজাতিকে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনে মানুষ এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার অধীনতা স্বীকার করে তাঁর বিধান অনুসারে চলবে, এটিই ধ্রুব সত্য। এভাবে পরকালীন স্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করবে। আল কুরআনে আল্লøাহ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য।
‘মুসলিম’ শব্দের অর্থ আল্লাহতে সমর্পণ। অর্থাৎ স্রষ্টার নাজিল করা বাণীর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীর জীবনে অন্যতম প্রধান কাজ বায়তুল্লাহর হজ। স্রষ্টার প্রতি বান্দার আনুগত্য আর অনুরাগের যে ক্রমোন্নতি অর্জিত হয়, এর পরম অভিব্যক্তি ঘটে হজে। ফলে প্রত্যেক মুমিনের জীবনে অন্যতম কাক্সিক্ষত বিষয় এটি। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আল্লাহতে বিশ্বাসী মানুষ সমবেত হন প্রাচীন নগরী মক্কায়। হজ আল্লাহপ্রেমে ব্যাকুল বান্দার আকুল অভিব্যক্তি। তখন তাঁর সান্নিধ্যে উপনীত হওয়ার চেষ্টা চলে সব ভূষণ ত্যাগে। ধনী-গরিব সবাই সাদাসিধা একই পোশাকে আল্লাহর ঘরের চারপাশে তাওয়াফ করেন। মানুষ হিসেবে তারা সাম্য ও মৈত্রীর যে অনুপম নমুনা উপস্থাপন করেন, তা অতুলনীয়। বায়তুল্লাহর হজ এক দিকে যেমন ইবাদত ও আধ্যাত্মিক সাধনার উচ্চ অবস্থান, তেমনি সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বলতম নজির।
বায়তুল্লাহর হজের মাস জিলহজের সাথে রয়েছে আরেক ইবাদত। ৯ তারিখে আরাফায় অবস্থান আর ১০ তারিখে তাওয়াফে জিয়ারত হজের দু’টি প্রধান কর্তব্য। ১০ তারিখে হাজীদের আরো একটি অতি জরুরি করণীয়, কোরবানি করা। যারা হজে যাননি, তাদেরও হাজীদের মতো একই দিনে কোরবানি করতে হয়। কোরবানি হচ্ছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর স্মরণ। বস্তুত তাঁর অনুসরণে নিজের প্রিয় বস্তু আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ ইসলামী পরিভাষায় কোরবানি। মুসলিম উম্মাহর আদর্শিক পিতা হজরত ইবরাহিম আ: যেসব কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, এর একটি হলো- প্রিয়তম সন্তানকে আল্লাহর রাহে কোরবানি করা। আল্লাহর নির্দেশ পালনে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ চাইছিলেন ইবরাহিম আ:-এর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরীক্ষা নিতে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘হে ইবরাহিম, তুমি তো দেখছি, স্বপ্নকেও বাস্তবায়িত করলে’। বস্তুত আল্লাহর অশেষ করুণায় পুত্রের পরিবর্তে পশু কোরবানি কবুল করলেন ইবরাহিম আ: থেকে।
ইবরাহিম আ:-এর আদর্শ স্মরণীয় করে রাখার ব্যবস্থা করলেন আল্লাহ। আল্লাহ পরবর্তী মুসলিম উম্মাহর পালনীয় সাব্যস্ত করলেন পশু কোরবানি বিধান। কিন্তু নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা চাওয়া হয়েছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর মতো। আল কুরআনে বলা হয়েছে- ‘এসবের (পশু) গোশত কিংবা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের আল্লাহ-সচেতনতা।’ অর্থাৎ পশু কোরবানি করা হলেও এ মনোভাব থাকতে হবে, সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এমনকি প্রিয়জনকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে প্রস্তুত। তবেই কোরবানি সার্থক হবে।
ইবরাহিম আ:-এর প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নিজের প্রাপ্য, বক্তব্য, অভিমত আর প্রস্তাবের প্রাধান্যের দাবি পরিহার করলে তাঁর প্রকৃত অনুসরণ করা হয়। তেমনি হৃদয়ে ধারণ করতে হয় একাগ্রতা, আল্লাহর প্রতি ব্যাকুলতা। পার্থিব জীবনের প্রতি মোহ ও আকাক্সক্ষা যেন বদ্ধমূল না থাকে; বরং তা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত আমানত বিবেচনা করে তাঁর ইচ্ছা ও আদেশ অনুযায়ী ফেরত দেয়ার আগ্রহ পোষণ করা হয়, কোরবানি সেই আহ্বান নিয়ে হাজির হয় প্রতি বছর।


আরো সংবাদ



premium cement