২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নাফ নদীপথে চলাচল বন্ধ

সরকারকে সক্রিয় হতে হবে

-

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যবর্তী সীমান্ত নদী নাফ। মিয়ানমারের আরাকান পর্বত থেকে উদ্ভূত হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্ত ছুঁয়ে দুই দেশের সীমান্ত বরাবর প্রায় ৫০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এ নদী যেমন দুই দেশের সীমানা নির্দেশ করে, তেমনি এটি টেকনাফ উপজেলার ব্যবসায়-বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানাভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। তাই এ নদীকে যথাযথভাবে বলা হয়- টেকনাফের প্রাণ। সম্প্রতি টেকনাফের এ প্রাণ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। নদীপথে টেকনাফের বাসিন্দাদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। মিয়ানমারে সরকারি ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে চলমান সঙ্ঘাতে ওপার থেকে প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে ভারী অস্ত্রের গোলাগুলির আওয়াজ।
খবরে জানা যাচ্ছে, এপারের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন ও আশপাশ এলাকায় ভারী অস্ত্র ও গোলা বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সীমান্তের কাছে নাফ নদীতে ভিড়ে আছে মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ। গত এক সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে অন্তত পাঁচ-ছয়বার গুলি ছোড়া হয়েছে বাংলাদেশী নৌযানে। কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুট। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পৌঁছেনি কোনো পণ্য। সেখানে অবস্থানরত প্রায় ১০ হাজার মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে।
বিস্ময়কর হলেও সত্য, বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে কারা গুলি ছুড়ছে সেটি গত এক সপ্তাহেও জানতে পারেনি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবি।
একটি জাতীয় দৈনিক গত শুক্রবার খবর দিয়েছে, ‘সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুঝতে পারছে না গুলি মিয়ানমার জান্তা, নাকি বিদ্রোহীরা করছে। ফলে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না তারা।’ এর মধ্যে বুধবার মর্টারশেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন। এ কারণে সীমান্তের কয়েক গ্রামের আতঙ্কিত মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সীমান্তবাসী অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের কোনো গোয়েন্দা তৎপরতা কি নেই সীমান্ত এলাকায়? সরকারই বা কী করছে সীমান্তের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে? নমনীয় ভাষায় মৃদু প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কিছুই কি করার নেই? গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে দেয়া এক প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ বলেছে, ‘তাদের দিক থেকে একটি গুলিও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসা উচিত নয়।’ এটি আদৌ প্রতিবাদের ভাষা হলো কি না আমাদের জানা নেই।
মিয়ানমারের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিন্ন সীমান্তে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কোনো অধিকার সে দেশের নেই। উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ বেআইনি। কিছুদিন আগে দেশটির সরকারি বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বাংলাদেশে এসে পড়ে। তখনো মৃদু প্রতিবাদ ছাড়া কিছু করেনি সরকার।
সরকারের এমন নিষ্ক্রিয়তায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে দেশবাসীর মনে প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জমে আছে। আমরা কি নাফ নদীর ওপর অধিকার হারাতে যাচ্ছি? সেন্টমার্টিন কি ছেড়ে আসতে হবে আমাদের? মিয়ানমারের ভয়ে সমুদ্রসীমারও একটি অংশ কি ছেড়ে দিতে হবে বাংলাদেশকে?
আমরা মনে করি, মিয়ানমার ইস্যুতে সরকারের সক্রিয় হওয়ার দরকার আছে। না হলে সার্বভৌমত্ব রক্ষা কঠিন হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement