২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রত্যাশা

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙুন

-

টানা দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত আছে। চলছে অর্থনীতিতে মন্দাভাব। এ সময় মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশেরও বেশ উপরে। এ দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর শেষে সরকার মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামাতে চায়। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি কমাতে সবার আগে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ডলারের দর স্থিতিশীল করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট আলোচনায় তারা এমন মত দেন।
অর্থনীতিবিদদের অভিমত, এবারের বাজেট গতানুগতিক। বাজেট স্লোগানে সুখ ও সমৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। তবে গরিবের সুখী হওয়ার মতো কিছু নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই; বরং দেখা যাচ্ছে, পরোক্ষ করের বোঝায় আরো ন্যুব্জ হয়ে পড়বে সাধারণ মানুষ। যেমন- বাজেটে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি রুটি কিনলে অতি দরিদ্রকে যে ভ্যাট দিতে হবে, ধনী ব্যক্তিকেও একই ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। যার কারণে দরিদ্রদের জীবনযাত্রায় ব্যয় আরো বাড়বে। কিন্তু তাদের আয় সে হারে বাড়বে না। এতে সাধারণের জীবনমান আরো কমবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের বহু প্রয়োজনীয় চাহিদায় কাটছাঁট করতে হবে। অনেকের জীবন নির্বাহ করাই দায় হয়ে উঠবে। অর্থাৎ দেশের মুষ্টিমেয় ছাড়া সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না এই বাজেটে।
লক্ষণীয়, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে তারা পুষ্টিকর খাবার অর্থাৎ আমিষের পরিমাণ কমিয়েছেন। এখন অনেকে তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা খাচ্ছেন। জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাস্তবতা হলো, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। তিন মাস পরপর জ্বালানির দর সমন্বয় তথা বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে- এমন আশঙ্কা আছে। আবার ডলারের দরে অস্থিরতাও দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ছে। শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে। কাজ না পাওয়ায় তরুণসমাজ দেশে থাকতে চায় না। ব্যবসায়ীরাও দেশে থাকতে চান না। এসব খারাপ লক্ষণ। আসলে সংস্কার না আনলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।
যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল। তা করা হয়নি। তবে এত কিছুর পরও সরকার মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাইলে সবার আগে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এটি করতে না পারলে সরকারের আশা কেবল দুরাশাতেই পরিণত হবে। এর পরও কথা থেকে যায়। বর্তমান সরকার পুরোই ব্যবসায়ীবান্ধব। সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় নীতি সাধারণ মানুষের চেয়ে ব্যবসায়ীদেরই বেশি অনুকূলে। ফলে সরকারের পক্ষে কতটুকু জনবান্ধব হওয়া সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।


আরো সংবাদ



premium cement