২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পুষ্টির অভাবে মারা যাচ্ছে গাজার শিশুরা

তাদের বাঁচাতে বিশ্ববাসী কেউ নেই

-

ইসরাইল যে কায়দায় এবার গাজায় হামলা চালিয়েছে এর দৃষ্টান্ত সভ্য পৃথিবীতে বিরল। বেসামরিক নাগরিকের বাড়িঘর লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতাল-আশ্রয়কেন্দ্র। এ পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এই হামলায়। তাদের বেশির ভাগ নারী-শিশু। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো আইনের তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল। মানছে না আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ। এবারের হামলার বিশেষ লক্ষণীয় দিক হচ্ছে- শিশুদের নিশানা বানানো। যুদ্ধের শুরুতে গাজা থেকে খবর মিলছে সরাসরি হামলায় যত না শিশু মারা যাচ্ছে, এর চেয়ে বেশি ক্ষুধা-অনাহারজনিত কারণে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হওয়ার পথে।
ইসরাইল গাজায় খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছানোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে গাজাবাসী খাবার, পানীয়জলের অভাবে হাহাকার করছেন। অনেকে সপ্তাহের ব্যবধানে এক টুকরো রুটিও পাচ্ছেন না। গাজার আশ্রয়শিবির ও ছিন্নমূল হওয়া মানুষের খাদ্যাভাবের খবর ছড়িয়ে পড়ছে। দুধের শিশুর শিশুখাদ্য নেই। না খেয়ে অনাহারে থাকায় মা বুকের দুধ পর্যন্ত সন্তানকে দিতে পারছেন না । সর্বশেষ এক বার্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক জানাচ্ছেন, বিনাচিকিৎসা ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর মুখোমুখি গাজার আট হাজার শিশু। এদের বয়স পাঁচ বছরের কম। এদের মধ্যে এক হাজার ৬০০ শিশু ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার। মূলত স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছানোর অক্ষমতায় এমন অবস্থা। বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা করতে না পারায় তাদের জীবন হুমকিতে।
জাতিসঙ্ঘের পরিসংখ্যান, ২০২৩ সালে অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইলি আক্রমণ শিশুদের এতই দুর্গত করেছে তার ভয়াবহতা এর আগের চার বছরে সারা বিশ্বের সব শিশু মিলেও মুখোমুখি হয়নি। ছোট এলাকাটির শিশুদের বিপদ ও প্রতিকূলতা সমসাময়িক বিশ্বে দেখা যায়নি। ইতোমধ্যে গাজার ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু সংস্থার তথ্য, এদের মধ্যে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক পা দূরে আছে। তারা সবাই সব কিছু হারানোর পর একটি নিরাপদ আশ্রয়শিবির পাবেন তারও সুযোগ হয়নি। সমসাময়িক পৃথিবীতে এমন পীড়নের ঘটনা বিরল।
সাধারণত কোনো একটি জাতি শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হলে উদ্বাস্তুর অধিকার পায়। ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে তেমনটি মিলছে না। এ প্রতিকূল অবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার শিশুরা; এ পর্যন্ত সেখানে ১৬ হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে। গাজার দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয়টি শিশুর মধ্যে একজন ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে ও দ্রুত ওজন হারাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু সংস্থা জানাচ্ছে, ভূখণ্ডটির কার্যত ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই বেঁচে থাকতে ‘শোচনীয়ভাবে অপর্যাপ্ত’ খাদ্য ত্রাণের ওপর নির্ভর করছে। জাতিসঙ্ঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানাচ্ছে, ‘আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলাম তাই ঘটছে, অপুষ্টি গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে।’
জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এ শোচনীয় ও ভয়াবহ মৃত্যুগুলো মানবসৃষ্ট, এগুলো অনুমানযোগ্য ও পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য ছিল।’ কিন্তু এই সভ্য পৃথিবীতে তারপরও এটি হতে পারছে। আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্বব্যবস্থার মূলনীতি মানবাধিকার। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজটি করতে ইসরাইল মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমর্থন পাচ্ছে। তারা ইসরাইলকে অস্ত্রশস্ত্র, প্রয়োজনীয় অর্থ ও নীতিগত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। শিশুদের বাঁচানোর জন্যও যুক্তরাষ্ট্র কিছু করছে না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী-ইবা হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement