২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নিরাপদ-নির্ঝঞ্ঝাট ঈদযাত্রা

অধরাই থেকে যাবে?

-

দেশে দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য ঈদের সময় শহরের অস্থায়ী আবাস ছেড়ে স্থায়ী নিবাসে আপনজনের সান্নিধ্য পেতে লাখো মানুষের ঘরমুখো হওয়া। তারা আবার ঈদ-উত্তর কর্মস্থলে ফেরেন। কিন্তু গণপরিবহনে যাতায়াতকালে যাত্রীদের সুখকর কোনো স্মৃতি নেই। এ তিক্ত অভিজ্ঞতা দশকের পর দশক ধরে সইতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটায় ঈদযাত্রা আনন্দদায়ক না হয়ে বরং হয়ে উঠছে কষ্টদায়ক, বিশেষ করে সড়কপথের অবস্থা হয় দুর্বিষহ। অনেক সময় সড়কপথে দুর্ঘটনায় পড়লে ঈদ-আনন্দ হয়ে ওঠে বিষাদময়। ঈদের সময় দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। অবস্থা এমন যে, ঈদের আনন্দযাত্রায় অশেষ দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার শিকার হওয়া যেন যাত্রীদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার দশক ধরে দেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা এখনো স্বচ্ছন্দ, নিরাপদ ও নির্বিঘœ হয়নি। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করে যে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তা নীতিনির্ধারকদের জানা থাকলেও তারা নির্বিকার।
আসলে আমাদের বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার যে হাল তা ঈদযাত্রায় একই সময়ে বিপুল যাত্রীর চাপ সামলাতে অপারগ। এ কথা সত্যি, সড়কপথে যানজট, দুর্ঘটনা, জনদুর্ভোগ শুধু ঈদযাত্রার বাস্তবতা নয়। ১২ মাসই একই চিত্র দেখা যায়। আমাদের সড়ক-মহাসড়কে যানজট, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই কেবল ঈদের সময় নয়, সারা বছর সড়কে নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিতে গণপরিবহন চালকদের বিশৃঙ্খল মানসিকতা, অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ও নিরাপত্তাবিধি পালনে বাধ্য করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী দুর্ভোগ, বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনামুক্ত রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে প্রতিবার বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ অংশীজনদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে। এসব বৈঠকে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়, কোনোভাবে ঈদযাত্রায় লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন চলতে দেয়া হবে না, সিটি সার্ভিসের বাস দূরপাল্লায় চলতে দেয়া হবে না, ট্রাক ও পিকআপে যাত্রী বহন করতে দেয়া হবে না, বাড়তি ভাড়া আদায় শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে, সড়ক-মহাসড়কের চাঁদাবাজি যেকোনো মূল্যে রুখে দেয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে এসবের তেমন কিছুই হয় না। ঈদযাত্রায় মাত্র তিন-চার দিনে ঢাকা থেকে কোটির কাছাকাছি মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা করেন। এত অল্প সময়ে এত যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা আমাদের গণপরিবহনের নেই। যেখানে রেলসেবা অপর্যাপ্ত, নৌপরিবহন ব্যবস্থাও সুবিধাজনক নয়। সুতরাং বেশির ভাগ মানুষ আপনজনের টানে ঝুঁকি নিয়ে সড়কপথে যাত্রা করেন। আরেকটি বিষয়, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সরকারিভাবে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়, তা ঈদের আগে যতটা সক্রিয় থাকে, ঈদের পর ফিরতি যাত্রায় তেমন থাকে না। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
সুস্থ-নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে ঈদের কিছু দিন আগে কর্মপরিকল্পনা সাজালে হবে না। প্রয়োজন কমপক্ষে কয়েক বছরের টেকসই ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার অধীনে রেললাইন সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে রেলের সংখ্যা বাড়িয়ে সড়কপথের যাত্রীদের রেলমুখী করা, নৌপথ সংস্কার ও জনবান্ধব করা। সড়কে বিআরটিসির রুট বিস্তৃত করে বাসের সংখ্যা বাড়ানো। আর মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা। এসব বাস্তবায়ন হলেই কেবল সম্ভব ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘœ করা।


আরো সংবাদ



premium cement