২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
এবারের বাজেট নিয়ে যত কথা

আশা করার কিছু নেই

-

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, লেখক, চিন্তাবিদ, সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক দলসহ সব সেক্টরের অংশীজন বাজেটের ভালো-মন্দ নিয়ে নিজেদের মতামত জাতির সামনে তুলে ধরেন। এটি সবসময়ের ঐতিহ্য। কারণ বাজেটে একটি জাতির আগামী এক বছরের আয়-ব্যয় ও উন্নয়নের সমস্যা-সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি অংশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার সুচিন্তিত পরিকল্পনা জাতির সামনে পেশ করার কথা। সে কাজটি এবারের বাজেটে কতদূর অর্জিত হলো সে তথ্য জেনে মানুষ নিজেদের প্রাপ্তির বিষয়ে আশাবাদী হতে পারে অথবা নিরাশার অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে।
সুতরাং বাজেট নিয়ে আলোচনায় সচেতন মানুষের আগ্রহ থাকে যথেষ্ট। তবে বাজেট আলোচনায় সংশ্লিষ্টরা আগে যে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতার নিরিখ সামনে রেখে আলোচনা করতেন, আমাদের ধারণা, এবার তাতে খানিকটা ব্যত্যয় ঘটেছে।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সবসময় বাজেটকে স্বাগত জানানো হয়; কিন্তু এবার দেখা গেল, শুধু স্বাগত জানানো নয়, দলটি বাজেটের অনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষেও সাফাই গাইছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া শুধু নয়; বরং এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এবারের বাজেটে এমন ইনডেমনিটিও দেয়া হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের এই আইনি আশ্রয় দেয়ার পক্ষে সাফাই শুধু সরকার বা ক্ষমতাসীন দল গায়নি; বরং একশ্রেণীর ব্যবসায়ী গোষ্ঠীও সেটি করেছে সন্তোষের সাথে। এর মধ্য দিয়ে তারা যেন জাতিকে ঠাণ্ডামাথায় নীতিহীনতার দিকে ঠেলে দেয়ার এ অপকর্মের সামাজিক স্বীকৃতি দিলেন। এটি বাজেটের একটি দিক। আরেকটি হলো, পরিকল্পনা-সংক্রান্ত।
এ বিষয়ে গত সোমবার রাজধানীতে পৃথক দু’টি অনুষ্ঠানে পেশ করা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের কথা থেকে উদ্ধৃত করতে চাই। অর্থনীতি বিষয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম নামের একটি সংগঠন যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বক্তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থহীন। পিছিয়ে পড়া মানুষের সুরক্ষায় বাজেটে কিছু নেই। না আছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের, বিনিয়োগ সচল রাখার বাস্তব পদক্ষেপ, না আছে প্রবৃদ্ধি সচল রেখে কর্মসংস্থানে স্থিতিশীলতা ধরে রাখার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা।
শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, সমাজের অন্য সব খাতের মানুষের জন্যও এ বাজেটে আশা জাগানোর মতো কিছু নেই। দীর্ঘ সময় ধরে সুশাসনের অনুপস্থিতি এবং লুটপাটের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিকে যে খাদের কিনারে ঠেলে দেয়া হয়েছে তা থেকে উদ্ধারের ন্যূনতম সদিচ্ছার প্রতিফলন এতে ঘটেনি। তাদের ভাষায়, বাজেট ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য প্রতিকূল এবং দুর্নীতি-সহায়ক। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও সুরক্ষা দেয়ার কোনো রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাজেটে নেই।
দ্বিতীয় যে অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজন বাজেট বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটির যৌথ আয়োজক ছিল নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদ। সেখানে বক্তারা চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি ভঙ্গুর ও অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকলেও সরকার সংস্কারের পথে হাঁটছে না। দেশের পুঁজি পাচার হচ্ছে; ব্যাংক খাত বিশৃঙ্খল, ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়ে চলেছে; আর এ পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার-ঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠীকে অন্যায় সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
গত ১৫ বছর ধরে সরকার এই ক্ষমতার রাজনীতিই করছে। সুতরাং এ বাজেট থেকে আশা করার কিছু নেই।


আরো সংবাদ



premium cement