সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে মানুষ
- ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০৫
নিকট অতীতে আমাদের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। তাই গ্রামীণ জনপদ ছিল দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। সময়ের ব্যবধানে দেশে শিল্পায়ন হওয়ায় আগের চেয়ে আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গ্রামীণ অর্থনীতির ভূমিকা কিছুটা কমেছে। তবে কৃষির অবদান এখনো অনস্বীকার্য। যেহেতু বাংলাদেশ বৃহদায়তন গ্রাম সেহেতু বর্তমানেও গ্রামীণ অর্থনীতি দেশের উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছে। সেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে দুঃসময় চলছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বেড়েছে। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে কৃষি, প্রবাসী আয়। একই সাথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগ গ্রামে বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমঘন এসব শিল্পে কর্মসংস্থান বেড়েছে। কর্মসংস্থান বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা। কিন্তু আমানত কমায় বিনিয়োগ কমে গেছে। এতে গ্রামে কর্মস্থান সঙ্কোচিত হয়ে পড়ছে। গ্রামের মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে ভিড় করছে।
গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান, টানা এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত মাসে বেড়ে হয় ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অথচ গ্রামের মানুষের বেশির ভাগ অর্থ খরচ হয় খাবারে। খাদ্যের দাম বাড়লে তাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে গ্রামের মানুষ এখন আর সঞ্চয় করতে পারছে না, খরচ কুলাতে না পেরে জমানো অর্থ ভেঙে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে তাদের। এর প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের মার্চ প্রান্তিকে গ্রামে ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে আমানত কমে হয়েছে দুই লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৭২ হাজার কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ২১ শতাংশ।
দেশের প্রবাসী আয়ের বড় অংশ যুক্ত হয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে। রেমিট্যান্সের যে অর্থ দেশে আসে সরাসরি তা চলে যায় ব্যাংকে। এ কারণে গ্রামাঞ্চলে আমানত বেড়ে যাওয়ার কথা। সেখানে আমানত না বেড়ে উল্টো কমেছে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। গ্রামে শুধু আমানত নয়, বিনিয়োগও কমছে সমানতালে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান, গত বছরের মার্চ প্রান্তিকে গ্রামে ব্যাংকগুলোর ঋণ ছিল এক লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে কমে হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে গ্রামে ব্যাংকগুলোর ঋণ কমেছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ২৬ শতাংশ।
দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক অন্যান্য সেবার ব্যয় বেড়েছে। তরল গ্যাস থেকে শুরু করে কৃষি উপকরণ এবং পশু, পোলট্রি ও মৎস্যখাদ্যের দাম বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। সবমিলিয়ে জীবনযাত্রা, কৃষিসহ সবদিকে ব্যয় বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের মানুষকে সঞ্চয়ে হাত দিতে হচ্ছে। ফলে গ্রামে ব্যাংকগুলোর আমানত কমে যাচ্ছে। সব ব্যাংকের গ্রামীণ শাখাগুলোতে আরো আমানত কমে যাওয়ায় শঙ্কায় ব্যাংকাররা।
দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে ব্যাংকে সঞ্চয়ের মতো অর্থ বেশির ভাগ মানুষের হাতে অবশিষ্ট থাকছে না। যেহেতু গ্রামের মানুষের বহুমাত্রিক আয়ের খাত নেই। সীমিত উৎস থেকে তাদের আয় আসে, সেহেতু জীবনযাত্রার মান অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় গ্রামে বসবাস করা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে চলতে পারছে না। যে কারণে তারা ডিপিএস ভেঙে ফেলছে। এতে ব্যাংকের আমানত কমে আসছে।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির মতো গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গতি আনা সম্ভব হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা