২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষার্থীদের মেধা-নৈতিকতা নিয়ে উদ্বেগ

নতুন শিক্ষাক্রম পরিমার্জন জরুরি

-

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতির শিক্ষাব্যবস্থা যত বেশি বাস্তবমুখী, বিশ্বে ওই জাতি তত বেশি সমৃদ্ধি অর্জন করছে। তাই দেশে দেশে নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতির আলোকে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়ে থাকে। যাতে নাগরিকরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রকৃত মানবসম্পদ হতে পারে। সঙ্গত কারণে শিক্ষা নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেখা যায় না কাউকে। কিন্তু আমাদের দেশ ব্যতিক্রম। এ দেশে এখনো একটি টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি; বরং বিভিন্ন সময়ে সরকারের ইচ্ছেমতো শিক্ষাক্রম ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখনো সেই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। কার্যত বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিতে বিপরীত ফল দিয়েছে। পরিণতিতে আমাদের শিক্ষা বৈশ্বিক পর্যায়ে মানসম্পন্ন বিবেচিত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমরা মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি।
এই যখন বাস্তবতা তখন গত বছর থেকে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরে বাস্তবমুখী শিক্ষার নামে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে। কিন্তু শুরু থেকে প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে অভিভাবকরা অসন্তুষ্ট। তাদের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু সরকার কোনো কিছু আমলে না নিয়ে যেকোনো মূল্যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে যেন বদ্ধপরিকর।
সরকারের এ আচরণ অভিভাবকদের কাছে গ্রহণীয় মনে হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে তারা নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গত সোমবার নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল দাবিতে মানববন্ধনে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, নতুন শিক্ষাক্রমের আড়ালে শিক্ষার্থীদের মেধা-নৈতিকতা ধ্বংসের সব আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট-নির্ভর হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মৌলিক কিছু শিখছে না। অন্যদিকে অ্যাসাইনমেন্টের সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইনও নেই। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষার্থীরা ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর সাথে আছে ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক।
প্রজেক্ট অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষাব্যয় বেড়ে গেছে। এই বাড়তি ব্যয় অনেক বাবা-মায়ের পক্ষে বহন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে শিক্ষার যে ব্যয় তা অভিভাবকদের ওপর বাড়তি চাপ। গত বছর থেকে প্রবর্তিত শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিষয়ে যে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন ছিল, তা না দিয়ে আরো কমিয়ে আনা হয়েছে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। যা পড়ানো হচ্ছে; শেখানো হচ্ছে; তা অভিভাবকদের বোধগম্য নয়। এ জন্য তারা উৎকণ্ঠিত, তাদের সন্তানরা শিক্ষার নামে আসলে কী শিখছে। এ অবস্থার উত্তরণে অবশ্যই নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কার করা জরুরি।
লক্ষণীয়, নতুন শিক্ষাক্রমে মৌলিক শিক্ষার কোনো বালাই নেই। শিক্ষাক্রম নিয়ে যা হচ্ছে তা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়; বরং বলা ভালো, এক ধরনের ছেলেখেলা চলছে। শিশুরা যেন শিক্ষা বিভাগের পুতুলে পরিণত হয়েছে। এমন খামখেয়ালি জাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তাই সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement