২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পুলিশের রক্ষক হয়েছে ভক্ষক

কেনাকাটার দুর্নীতি তদন্ত হোক

-

গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমগুলো এমনভাবে সেট করা যে, আপনা থেকেই তা দুর্নীতি প্রতিরোধ করবে। আমাদের হয়েছে তার উল্টো। বাংলাদেশে দুর্নীতির বিস্তার কতটা ব্যাপক তা বলার মত নয়। পুলিশ ও দেশরক্ষা বাহিনীর একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতার দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন। পুলিশের সদ্য সাবেক আইজির বিরুদ্ধে এখন এত অভিযোগ এসেছে যে, মানুষ ভাবছে, তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বদলে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ ও জনগণের সম্পদ লোপাটেই কেবল সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। পুলিশ টেলিকমের কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতির একটি চিত্র সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের শীর্ষপদে থাকার সময় তিনি নিজের সুবিধামত কেনাকাটা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
পুলিশ টেলিকমের অধীনে গত আট বছরে ৪২ বার কেনাকাটা হয়েছে তার ৪১ বারই করেছে তার মদদপুষ্ট প্রতিষ্ঠান। বেনজীর র‌্যাবের মহাপরিচালক হওয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়। পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। পছন্দনীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে জায়গামতো পদায়িত করেন। এদিকে কেনাকাটায় চলতে থাকে জালিয়াতি। নিরাপত্তা বাহিনীর কেনাকাটা স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সরঞ্জাম কিনতে হয় মানসম্পন্ন। দেখা গেল, যেনতেন মানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পত্রিকাটি ওয়াকিটকি ক্রয়ের কথা উল্লেøখ করে। বলা হয়েছে, একটি নামীদামি প্রতিষ্ঠান থেকে এগুলো কেনা হয়েছে। বাস্তবে এগুলো নির্ধারিত মানের নয়। মূল প্রতিষ্ঠান থেকে না কিনে এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল খোলাবাজার থেকে। যে কারণে এই সরঞ্জামের দাম অনেক কম হওয়ার কথা। কিন্তু এগুলো কেনা হয়েছে তিন থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি দামে। আট বছরে রেডিও যন্ত্রাংশ কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে পুলিশ টেলিকম। এগুলো কেনায় অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে। ২০২০ সালে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ কেনা হয়। ২০২১ সালে সে ব্যয় হঠাৎ পাঁচগুণ বেড়ে ৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। বেনজীরের পদোন্নতির সাথে কেনাকাটায়ও জোয়ার আসে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে আমরা দেখেছি খিচুড়ি রান্না শেখা বা পুকুর কাটার কৌশল সরেজমিন দেখার জন্য সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করছেন। পুলিশের কেনাকাটায় তার চেয়েও উদ্ভট ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকার খবরে বলা হয়, পণ্যের কারখানা ছিল চীনে, কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা ভ্রমণ করেছেন মালয়েশিয়া। কয়েক বছর ধরে এমনই সফর হয়েছে বলে পত্রিকাটি জানায়। নিরাপত্তা সংস্থার গুরুদায়িত্বে নিয়োজিতরা শুধু দুর্নীতি করছেন এমন নয়, পুরো বিষয়টিকে তারা ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছেন।
বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন খাতে বড় বড় অঙ্কের দুর্নীতির খবর বেরিয়েছে। দুর্নীতিগুলো হয়েছে হাজার কোটি টাকার অঙ্কে। পুলিশ টেলিকমের দুর্নীতি শত কোটি টাকার হলেও রাষ্ট্রের জন্য এটি গুরুতর। র‌্যাব পুলিশের প্রধান নিজে দুর্নীতির হোতা হলে দেশের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মধ্যে পড়াই স্বাভাবিক।
বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। পুলিশ বিভাগ অপরাধীমুক্ত করা রাষ্ট্র্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


আরো সংবাদ



premium cement