২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবার সেই কোটা নিয়ে বিতর্ক

এটি অনভিপ্রেত, অযৌক্তিক

-

সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছেন উচ্চ আদালত। এ নিয়ে আবারো আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কোটাপদ্ধতির অবসানের মাত্র ছয় বছরের মাথায় কী উদ্দেশ্যে, কেন একটি মীমাংসিত বিষয় আবারো বিতর্কের মঞ্চে তোলা হলো তা স্পষ্ট নয়।
শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষার্থীদের অনেকের প্রথম পছন্দ থাকে সরকারি চাকরি। কিন্তু সরকারি চাকরির সীমিত সংখ্যার কারণে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় তাদের। কঠোর পরিশ্রম করেও সরকারি চাকরির সোনার হরিণের দেখা পান না অনেকে। তার ওপর ৫৬ শতাংশই যদি কোটাধারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে তাহলে সেটি যে বৈষম্যমূলক সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সেই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। কোটা ব্যবস্থা যে বৈষম্যমূলক, সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী সে বিষয়ে তখন জাতীয় ঐকমত্য প্রকাশ পায়। এমনকি কোটার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর যে যুক্তি দেখানো হয় সেটিও যে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মানজনক সেই বিষয়টিও উঠে আসে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদসহ সব চিন্তাশীল মানুষের মতামতে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল শাবিপ্রবির ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো দেশ বা জাতির অনগ্রসর কোনো গোষ্ঠী যদি অবহেলিত হয় তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য কোটা দেয়া হয়। তবে যদি কোটার সংখ্যাই বেশি হয়; তা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। কোটার অনুপাত অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত হতে হবে।
আমাদের সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকার বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। তাদের জন্য কোটা সংরক্ষণের বিরোধী কেউ নয়। কিন্তু গণহারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালুর মানে নেই। তাদের বংশধররা অনগ্রসর নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনী এবং সন্তানদের সব জায়গায় কোটা দেয়াটাই তাদের সম্মানিত করার একমাত্র উপায় কিনা সেটিও ভেবে দেখার মতো। মুক্তিযোদ্ধারা একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধ করেছিলেন, বৈষম্যমূলক সুবিধা পাওয়ার আশায় নয়। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের জনগণ যে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত ভাতা দিয়ে যাচ্ছে সেটিও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের কারণেই। এই কথাটিই নতুন করে বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তারা কি কোনো বিনিময় পাওয়ার জন্য করেছিলেন? তারা তো নিজের কর্তব্যবোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে একটি ছেলে চোখ হারিয়েছিল। আরো অনেকে অনেকভাবে আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছে। এটি একটি যৌক্তিক ইস্যু। অনেক আগেই সমাধান করা উচিত ছিল। এখন যে আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে- এটি দুঃখজনক।
কোটাবিরোধী আন্দোলন আবারো তীব্রতর হবে, সন্দেহ নেই। আদালত বৈষম্যের পক্ষে থাকতে পারে না। জনমতের প্রেক্ষিতে আদালতের রায় পাল্টানোর দৃষ্টান্ত দেশে আছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির অনুকূলে আদালতের রায়ও পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে।
মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক অনভিপ্রেত। বিষয়টির আশু নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement