যেন দুষ্টচক্রের লালন
- ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০৫
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিনা প্রশ্নে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ব্যক্তির পাশাপাশি কোম্পানিও এ সুযোগ পাবে। চার বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধের এই সুযোগ দেয়া হলো। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। যদিও সেই সুযোগ কেউ কাজে লাগায়নি।
এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেছেন, ব্যবসায়ী মহলের দাবি ছিল, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকেও দাবি ছিল, অডিটজনিত কারণে কিছু ব্যবসায়ী তাদের বৈধ সম্পদ দেখাতে পারছেন না, সে কারণে আমরা এই সুযোগ দিয়েছি। তবে এ যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সিপিডি বলেছে, কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ তা দুষ্টচক্রের মাথায় হাত বুলানোর মতো।
প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে আয়করের সর্বোচ্চ হার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে কিভাবে! এটি নৈতিক, অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে নিয়মিত করদাতাদের তিরস্কার করা হচ্ছে। বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৎ করদাতাদের প্রতি চরম অন্যায়। এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় অগ্রহণযোগ্য।
টিআইবি বলেছে, অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ফিরিয়ে আনায় সৎ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুৎসাহিত করবে। পাশাপাশি এর আওতায় ঘোষিত অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখা দেশে দুর্নীতি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশে করখেলাপি, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের একটি প্রবল দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে। এ দুষ্টচক্রের মাথায় হাত বুলিয়ে টাকা আনবে সরকার। আসলে কালো টাকা সাদা করার এমন নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করতে যেন সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দায়মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রকারান্তরে সরকার নাগরিকদের দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ অবারিত করছে। রাজস্ব বাড়ানোর খোঁড়া যুক্তিতে দুর্নীতি ও অনৈতিকতার বিকাশের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে।
সরকার বলছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, অপ্রদর্শিত এবং অবৈধ আয় কারা করতে পারেন? বলার অপেক্ষা রাখে না, তা অবশ্যই সরকারঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ক্ষমতার উত্তাপে করে থাকেন? তা হলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের অর্থ দাঁড়ায় যারা রাষ্ট্রীয় তহবিলের অর্থ লুটপাট করেছেন, তাদের অবৈধ উপার্জনকে বৈধতা দিচ্ছে সরকার।
সঙ্গত কারণে অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, কালো টাকার মালিকদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করে কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যাতে লাগামহীন দুর্নীতির রাশ টানা যায়। তবে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের সৎ নাগরিকদের এই প্রত্যাশা পূরণ করবে, এটি দুরাশা বলে মনে হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা