অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির আশা নেই
- ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় দুষ্টচক্রের ফাঁদে আটকে পড়া অবস্থায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জটিল আবর্তে আমদের অর্থনীতি। এ থেকে উত্তরণে জটলার শুরু যেখানে সেখানে হাত দেয়া প্রয়োজন। সে দিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকার কৃত ভুল ও সুবিধাবাদিতার নীতি আড়াল করে আগানোর চেষ্টা করছে। প্রতি বছরের মাঝামাঝিতে বিশাল আকারের বাজেট পেশ তাই চলমান ধারাবাহিকতার একটি অংশ। বরাবরের মতো সরকারের ইচ্ছা এখানে প্রাধান্য পায়। ফলে মানুষের জীবনে যে দুরবস্থা রয়েছে বাজেট তা আরো বাড়িয়ে দেয়। একটি জনবান্ধব সরকার প্রধানত এ অবস্থায় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এক নম্বর টার্গেট করত। আমাদের বাজেটে সে ধরনের টেকসই নীতি দেখা গেল না।
একটি দক্ষ ব্যবস্থাপনায় বাজেট বাস্তবায়নের হার বাংলাদেশে খুব কম। তার পরও প্রস্তাবিত বাজেটও বরাবরের মতো ঢাউস। এবার বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলারের তুলনায় টাকার মানের অবমূল্যায়নে আগের তুলনায় এর আকার কমছে। গত বছরের তুলনায় ডলারের অঙ্কে এবারের বাজেট ৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। টাকার বড় অঙ্ক বসিয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতির আকার বড় করা যায় না। অর্থনীতি শক্তিশালী করতে মুদ্রাপাচার ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এবারের বাজেটের দিকনির্দেশনায় শুদ্ধতার নীতি গ্রহণের দিকটি বরাবরের মতো উপেক্ষিত। সে কারণে কালো টাকা সাদা করতে ১৫ শতাংশ কর রাখা হবে। অপর দিকে, বৈধ আয়ের ওপর দিতে হবে এর দ্বিগুণ- ৩০ শতাংশ আয়কর।
এবারের বাজেটেও ব্যয় মেটাতে বাড়তি আয়ের পথ উন্মুক্ত করতে কোনো টেকসই নীতি গ্রহণ করছে না সরকার। ফলে নিয়মিত করদাতাদের ওপর আরো করের বোঝা চাপতে যাচ্ছে। যারা কর ফাঁকি দেন তাদের জালের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেই। সাধারণ মানুষ আয়করে কোনো ছাড় পায়নি আবার পরোক্ষ করও বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি এ করের বোঝাও তাদের ঘাড়ে উঠবে। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতির জোগান দেয়া হবে ঋণ করে। ইতোমধ্যে বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ এ বাজেটে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ রাখতে হয়েছে শুধু ঋণ পরিশোধে। তবু ঋণ করে ঘি খাওয়ার নীতি সরকারের বরাবরের মতো অব্যাহত রয়েছে।
মূল ঋণ পরিশোধের চাপ সামনে ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। বিপরীতে ডলারের মজুদ যেভাবে কমছে এক পর্যায়ে অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। তার পরও সরকার উচ্চ ব্যয়ের নীতি থেকে সরে আসেনি। চলমান ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়েছে। পণ্যমূল্যের চাপে পিষ্ট মানুষের কষ্ট লাঘব বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল। সিপিডির পক্ষ থেকে এ বাজেট সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে, দেশে চলমান অর্থনৈতিক উদ্বেগ মোকাবেলায় যে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, তা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নেয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতি রোধ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজেটে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি গ্রোথ, বিনিয়োগের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অতি উচ্চাভিলাষী। বাস্তবতা বিবর্জিত। বাজেটে অর্থনৈতিক সূচকের অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
বর্তমান সরকার খুব কম ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছা আমলে নিয়ে থাকে। এ ধরনের একচেটিয়া ব্যবস্থাও অনেক সময় জনগণের কল্যাণে আসে। যদি সরকার পরিচালনাকারীরা দক্ষ হয়। এ সরকার এমন দক্ষতা দেখাতে পারেনি। বর্তমান সরকার অর্থনীতিতে দুর্নীতি-অনিয়ম ছাড়া উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি। ব্যাংকব্যবস্থায় লুটপাট হয়েছে, সেটি শুধরে নেয়ারও কোনো আগ্রহ নেই। এ অবস্থায় একটি বাজেট প্রস্তাব ও বাস্তবায়ন মানুষের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে এমনটি আশা করা যায় না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা