২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মসলার বাজারে অস্থিরতা

দুষ্টচক্রের ব্যূহ ভাঙুন

-

প্রতি বছর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে দেশে মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। এই সুযোগে একটি ব্যবসায়ী চক্র অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাজারে কারসাজি করে। কৌশলে মজুদ করে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। বাজার অস্থিতিশীল করে চড়া দামে বিক্রি করে।
এবারো একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোরবানির ঈদের আর মাত্র ৯-১০ দিন বাকি। এর বেশ কিছু দিন আগে থেকেই মসলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। রমজানের আগেও এসব পণ্যের দাম শিথিল ছিল। এখন সব মসলার দাম বাড়তি। বাজার দর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রাজধানীতে মসলা পণ্যের খুচরা ও পাইকারি বাজারে দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে এলাচির দাম। গত এক বছরে রসুন, হলুদ ও এলাচির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ও পেঁয়াজের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। সব মিলিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে মসলার বাজারে। পুরো মসলার বাজার এখন চক্রের কবলে। এরাই দিন পঁচিশেক আগে জিরা, এলাচ ও লবঙ্গের মতো মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এসব মসলা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে।
কাস্টমস বিভাগের সূত্রমতে, যত দ্রুত সম্ভব কাস্টমস থেকে পণ্য খালাস করা হচ্ছে। যাতে বাজারে কোনো ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে তথ্য, চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত আমদানি হওয়ায় এ মুহূর্তে বাজারে মসলার কোনো সঙ্কট নেই। এর পরও মসলার প্রতিটি পণের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মসলা ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চাল-ডাল-আটাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ওই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলাচ দানা, জিরা, লবঙ্গ, মরিচ, হলুদ, ধনেসহ বিভিন্ন প্রকারের মসলাজাতীয় পণ্য।
মূলত ভারত থেকে জিরা ও এলাচ, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও গুয়েতেমালা থেকে লবঙ্গ ও দারুচিনি আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা এতদিন এসব দেশে উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত দেখালেও এখন এর সাথে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি। তবে আসল কথা হলো- কোরবানি ঈদের সময় মসলার চাহিদা বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি থাকায় সেই চাহিদা পুঁজি করে ব্যবসায়ীদের একটি দুষ্টচক্র মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করে।
সঙ্গত কারণে বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, দেশে ভোক্তাদের অনুকূলে এখনো টেকসই বাজারব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও সরকারের দায়িত্ব বাজারে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে প্রতিটি পণ্যের দাম যৌক্তিক রাখা। কিন্তু সরকারের নাগরিকবান্ধব পদক্ষেপের অভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকতে হচ্ছে। পরিণামে ব্যবসায়ীদের দুষ্টচক্র সক্রিয় থাকতে পারছে। এখন যে মসলার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা-ও একই কারণে।


আরো সংবাদ



premium cement