২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জনমানসে সহিংসতার প্রবণতা

সামাজিক অস্থিরতা দায়ী

-

দেশে সাধারণভাবে প্রায় সবার ভেতর অসুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব জেঁকে বসেছে। যার কারণে আমাদের সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। আগের চেয়ে বেশি ঘটছে সহিংস ঘটনা। যেমন, গত এপ্রিলের প্রথম ভাগে ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখ মিলিয়ে ছয় দিনের ছুটির মধ্যে পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ সহায়তা চেয়ে ফোন আসে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। এর এক-চতুর্থাংশের বেশি ছিল সংঘর্ষ, মারামারির কারণে।
নয়া দিগন্তের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি বিভাগীর কমিশনারদের বৈঠকে আলোচিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগ এবং মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দুুই হাজার ১৭৩টি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা মার্চের তুলনায় ১৯৮টি বেশি। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন, তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) আপাতদৃষ্টে ছোটখাটো ঘটনার পর বা সূত্র ধরে অন্তত ১৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সারা দেশে প্রায়ই মারাত্মক সব অপরাধ ঘটছে। অপরাধতত্ত্ববিদ আর মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দেশে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে। এ অস্থিরতা বিভিন্ন অপরাধ উসকে দিচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনায় খুনের মতো সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটছে। লক্ষণীয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘তুচ্ছ কারণে’ খুন এমন সংবাদ হরহামেশা বা প্রতিনিয়ত ছাপা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টে ছোট্ট ঘটনার জের ধরে ভয়াবহ সহিংস প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন দেশের মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। দ্রুত রেগে যাচ্ছে। পরিণামে ঘটছে ভয়াবহ সব অঘটন। এর সমাজতাত্ত্বিক নানা দিক রয়েছে। যেমন, স্কুলে ভালো ফল করতে হবে, অভিভাবকদের এ তাড়নায় শিশুরা অস্থির থাকছে। বড়রা আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠায় অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ ছাড়া রাতজাগা বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মতো জীবনযাপনের কারণেও মানুষের মধ্যে রেগে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। মানুষের রাগ-ক্ষোভ বেড়ে যাওয়ার পেছনে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নৈতিক শিক্ষার অভাব, সম্পর্কের টানাপড়েন, হতাশা, অপ্রাপ্তি, আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, নাগরিক জীবনে রোজনামচায় পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কথা গবেষণায় উঠে আসছে।
আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করা বা স্বীকৃতি আদায়ে মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। এতে করে তাদের আগ্রাসী মনোভাব বা অস্থিরতা বাড়ছে। তারা অল্পতে সহিংস হচ্ছে। আবার বৈরী প্রকৃতিও মানুষকে অসহিষ্ণু করে তুলছে। দেখা যাচ্ছে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ গরমকালে দেশে হত্যা, চুরি, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ এবং মামলা বাড়ে।
আসলে দেশে বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় অসুখী মানুষের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। সুখের চলকগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাপিছু জিডিপি, সামাজিক সহায়তা, প্রত্যাশিত সুস্থ আয়ু, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও উদারতা। অতীতে মানুষ সুখ খুঁজত প্রধানত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি-সম্পর্ক, সুস্বাস্থ্য ও পেশাগত বা চাকরিতে সন্তুষ্টির মধ্যে। আর এখন অর্থবিত্তই প্রায় সবার কাছে মুখ্য।
সুখী হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সান্নিধ্য, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মজীবন, সুখ নিয়ে বেশি চিন্তা না করা, হতাশাবাদী না হওয়া, আভিজাত্যের প্রতিযোগিতা বা বহিঃপ্রকাশ না করে অনাড়ম্বর বা সাদামাটা জীবনযাপন করা। এগুলো সুখের পরিমাপক থেকে বিদায় নেয়ায় মানুষের মধ্যে এখন আর কোনো স্থিরতা নেই। দেশের এ অবস্থা একদিনে হয়নি। মানুষের অস্থিরতা, রাগ-ক্ষোভের প্রভাব পড়ছে কর্মক্ষেত্রে। এতে উৎপাদশীলতা কমে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে বিষয়গুলো অবহেলা করার উপায় নেই।


আরো সংবাদ



premium cement