২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নৃশংসভাবে খুনের প্রবণতা বাড়ছে

-

খুন করে লাশ গুমের ঘটনা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। একটি শ্রেণী প্রতিপক্ষকে হত্যা করে ব্যক্তিগত সমস্যার সুরাহা নিজেরা করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে এটি সহজ সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছে অনেকে। সেজন্য সমাজে ক্রমাগত পৈশাচিকতা বাড়ছে। গতকাল এক দিনে সংবাদপত্রে পাঁচটি নৃশংস খুনের ঘটনার খবর ছাপা হয়েছে। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক, পারিবারিক শত্রুতা এবং মাদকাসক্ত- এ ধরনের নির্মম ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিতে বিগত এক যুগে ভয়াবহ বিকৃতি ঘটেছে। মূলত ক্ষমতার জঠরে তৈরি হওয়া কুৎসিত পরিবেশ মানুষকে অমানবিক করে তুলেছে। তারই ভয়ঙ্কর নেতিবাচক প্রভাব জাতিকে গ্রাস করতে বসেছে।
বগুড়ায় স্ত্রী ও দুধের শিশুকে হত্যা করেন এক ব্যক্তি। এজন্য তাদের নিয়ে শহরের একটি হোটেলে ওঠেন তিনি। এরপর গলা কেটে তাদের হত্যা করেন। শিশুসন্তানের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে পার্শ্ববর্তী নদীতে ভাসিয়ে দেন। লাশ দু’টি বস্তাবন্দী করে বাথরুমে আটকে রেখে হোটেলের ভাড়া চুকিয়ে বিদায় নিতে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন। অভিযুক্ত আজিজুল হক ধুনটের বাসিন্দা, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। স্ত্রী আশামনিকে তিন বছর আগে বিয়ে করেন। সামরিক বাহিনী কর্মরত এ ব্যক্তি কেন ঠাণ্ডা মাথায় স্ত্রী-সন্তান হত্যা করলেন তা গভীর চিন্তার বিষয়।
একই দিন খবরের কাগজে আসা আরো দুটো খুনের একটির কারণ বিয়েবহির্র্ভূত সম্পর্ক, অন্যটি শত্রুতার বলি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় প্রেমিককে হত্যা করেন কানাডাপ্রবাসী নারী। খুনের শিকার ব্যক্তি জাপান প্রবাসী। ওই নারী গভীর রাতে তাকে হত্যা করে বাসায় লাশ রেখে আবার কানাডা ফিরে গেছেন। ওই নারীর অভিযোগ, হত্যার শিকার ব্যক্তি বিয়ের নামে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। আবার সেসবের ভিডিও ধারণ করে তাকে ক্রমাগত ফাঁদে ফেলছে। বারবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে আবার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করছে। এদিকে ময়মনসিংহের মনতলা এলাকায় একটি সেতুর কাছে পাওয়া গেছে একটি খণ্ডিত লাশ। দেহ থেকে তার মাথা ও পা দু’টি আলাদা করা হয়েছে। এরপর একটি লাগেজে ভরে সেটি সুতিয়া নদীর সেতুর নিচে ফেলে যায়। নিহতের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক বৈরিতায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অন্য ঘটনায় এক মাদকাসক্ত স্বামীর বলি হয়েছেন পোশাককর্মী। মাদকের কারণে দু’জনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। মাদক ছেড়ে দেবেন- এ শর্তে তাদের মধ্যে আবারো বিয়ে হয়। বাস্তবে স্বামীর কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই এ নারী তার ঘর ছেড়ে যান। এ অবস্থায় মাদকাসক্ত স্বামী তাকে রাস্তায় পেয়ে ছুরি মেরে হত্যা করেন।
এ ধরনের নৃশংস ঘটনা এখন প্রতিদিন ঘটছে। শত্রুতাবশত কেউ কাউকে হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। সামান্য স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া সুবিধাজনক বিকল্প মনে করা হচ্ছে। এখন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাও নিজের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একই কৌশল অবলম্বন করছে। এ লক্ষণ পুরো জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। যদিও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়।
জাতিকে এই নৃশংসতা থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে অপরাধীর বিচারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যারা নৃশংসতায় জড়াবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে পারলে এ নিষ্ঠুরতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ মিলতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement