২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বাইডেনের

ইসরাইলের মুখ রক্ষার উপায়

-


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা পেশ করেছেন। তিন স্তরের পরিকল্পনার প্রথম স্তরে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি দিয়ে রাফাসহ গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার, ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী কয়েক শ’ ফিলিস্তিনির মুক্তি এবং বিনিময়ে কয়েকজন ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস। সেই সাথে এ ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক। পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্বে হামাস তার কব্জায় থাকা সব বন্দীকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা হবে। পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হবে। কার্যত এটুকু বাইডেনের প্রস্তাব। এতে অনেক যদি-কিন্তু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলকে আদৌ বিশ্বাস করা যায় কি না সেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তারপরও হামাস এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, কারণ তাদের জনগণের জন্য পরিস্থিতি নরকতুল্য হলেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব দূরের কথা স্বজাতির লোকেরাও তাদের পক্ষে কার্যকর কিছু করেনি। এ দিকে বাইডেনের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ না করলেও এ নিয়ে প্রবল বিরোধিতার মুখে আছেন নেতানিয়াহু। তার জোট সরকারের দু’জন প্রভাবশালী মন্ত্রী বাইডেনের প্রস্তাব মেনে নিলে জোট থেকে পদত্যাগ অর্থাৎ সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। দেশটির একমাত্র লক্ষ্য হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া এবং নিজের নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চিত করা। বাইডেনের প্রস্তাবে যুদ্ধ শেষে হামাসের ভূমিকার বিষয়ে কোনো কথা নেই। সেখানে ইসরাইলের আপত্তি। কিন্তু গত আট মাসের যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে স্পষ্ট যে, হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য থেকে ইসরাইল অনেক দূরে। বরং যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে ইসরাইলের জন্য তত বিপদ বাড়বে। বাইডেনের বক্তব্যে তার আভাস আছে।

বাইডেন ইসরাইলের প্রতি তার প্রস্তাব মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি জানি, যদি অবহেলায় এ সময় পেরিয়ে যায়, তাহলে কী ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইসরাইলের জন্য কতটা বিপদের হতে পারে তার সামান্য ইঙ্গিত পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে দেশটির ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া থেকে। স্পেনসহ তিনটি ইউরোপীয় দেশের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘটনা সবরকম চেষ্টা চালিয়েও রোধ করতে পারেনি ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপজুড়ে ছাত্রবিক্ষোভে ক্রমেই ওই সব দেশের মানুষের মনে ইসরাইলের প্রতি বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধের যে অবস্থা তাতে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি মেনে নিলে বরং তার মুখরক্ষা হতে পারে। হতে পারে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার সহজ পথ।
বাইডেন বলেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) এবং রাজনীতিবিদদের একাংশ যারা গাজা যুদ্ধের অবসান চান না- তাদের কথামতো চললে সামনে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের দায় বাইডেনের ওপরও পড়ছে। আগামী নির্বাচনে তার হেরে যাওয়ার কারণ হতে পারে এটি। তার রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একটি বড় অংশ গাজায় ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞ এবং ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য তাকে দায়ী করছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে। নির্বাচনে ভরাডুবির শঙ্কা থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছেন বাইডেন সেটি স্পষ্ট।
তবে একটি নৃশংস গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। সারা বিশ্বের স্বার্থে।

 


আরো সংবাদ



premium cement