২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সিলেটে আকস্মিক বন্যা

দুর্গতদের পাশে দাঁড়াই

-


মাত্র পাঁচ দিন আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার উপকূলীয় জনপদের মানুষজন। ঝড়ে প্রাণ গেছে ২৩ জনের। প্রায় দুই লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। বহু মানুষ খোলা জায়গায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। বহু স্থান জোয়ারে তলিয়ে যাওয়ায় সেসব জায়গায় সুপেয় পানির অভাব দেখা গেছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে চলছে আহাজারি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ। তারা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিন কাটালেও দুর্গতদের দেখার কেউ নেই। সরকারি ত্রাণতৎপরতা খুব অপ্রতুল।
সিলেটের ওপর দিয়েও পাড়ি দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। এর প্রভাবে বৃষ্টি ঝরে অঝোরে। উজানে ভারতের মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জনপদে অবিরাম ঝরে বৃষ্টি। মেঘালয় থেকে বয়ে আসা বিপুল পাহাড়ি ঢলে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সিলেটের প্রধান দু’টি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ শাখা নদীগুলোতে আকস্মিক পানি বেড়ে গেছে। এতে সিলেটের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। মেঘালয় থেকে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় সিলেটে দেখা দিয়েছে হঠাৎ বিপর্যয়। লক্ষণীয়, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সিলেটে বেশ কয়েকটি বন্যা আঘাত হানে। প্রতিবার সিলেট অঞ্চলের মানুষ বিপুল ক্ষতির শিকার হন। ২০২২ সালেও ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছিল সিলেটে।
বন্যাকবলিত এলাকার অধিবাসীরা জানান, স্রোতই ভয়ের কারণ। প্রবল বেগে স্রোত আসায় বুধবার রাতে সবাই অসহায় হয়ে পড়েন। স্রোতের কারণে ওই রাতে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিলেটের নদ-নদীতে দ্রুত পানি বেড়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

ভারতের বরাক নদী দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসা পানি সুরমা-কুশিয়ারার মোহনায় জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। অবস্থা এমন যে, খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলার পাঁচটি উপজেলার শতাধিক গ্রাম, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। লোকজন গবাদিপশু, ধান-চাল সহায় সম্পদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেক স্থানে ঘরে রাখা খাদ্যসামগ্রী ও আসবাবপত্র ডুবে গেছে। যার কারণে পাঁচ উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অনেক স্থানে সড়ক ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাড়িঘর ফেলে বহু মানুষজন উঁচুস্থান বা সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিন দিন আগের আকস্মিক বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ- এই পাঁচ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন পাঁচ লাখের মতো মানুষ। বহু মানুষ পানিবন্দী হলে তাদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর্তনাদ দেখেও উদ্ধারকাজ চালানো হয়।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা হয়েছে এখন পর্যন্ত ২১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। এগুলোতে মানুষজন উঠতে শুরু করেছেন। বন্যাদুর্গতদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার, চাল, কিছু নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। অথচ এখন তাদের প্রয়োজন বেঁচে থাকার মতো ত্রাণসামগ্রী।
আমরা মনে করি, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা একা সরকারের পক্ষে খুব কঠিন কাজ। তাই দুর্গতদের সহায়তায় বেসরকারি পর্যায়েও এগিয়ে আসা দরকার। এগিয়ে আসতে হবে সম্পদশালীদেরও। কেবল তখনই আকস্মিক বন্যাকবলিত সিলেটের মানুষজন দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement