২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবার পানির দাম বাড়াল ঢাকা ওয়াসা

বোঝার ওপর শাকের আঁটিও দুর্বহ

-

আগামী ১ জুলাই থেকে পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এর আগে করোনাকালে দুই বছরে দু’বার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়ানো হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা ওয়াসা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পানির দাম বাড়ায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম এবার নিয়ে বাড়ানো হলো ১৬ বার। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়ায়। ২০২২ সালেও দাম বাড়াতে চাইলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। বিধি প্রণয়ন না করে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এরপর এতদিন পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত ছিল।
ঢাকা ওয়াসার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এবার আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা এখন ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, যা বর্তমানে ৪২ টাকা। মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন, ন্যূনতম বিলসহ সব রকম (পানি ও পয়ঃ) অভিকরের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর হবে।
ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় খাবারের পানি সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। তবে সংস্থাটি পানির দাম বাড়াতে যত না আগ্রহী, মান বাড়ানোয় তত উদাসীন। পানির মান নিয়ে ঢাকাবাসী অনেকের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে সরবরাহ লাইনের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা থাকে, অনেক এলাকায় ওয়াসার পাইপ থেকে ময়লাযুক্ত এক ধরনের হলুদ পানি বের হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
২০১৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেছিলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ, শতভাগ সুপেয়। আবার সেই তিনিই ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি অন্তত ১০ মিনিট ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন। যদিও এর আগে থেকে রাজধানীবাসী অভিযোগ তুলেছেন, ওয়াসার পানি ব্যবহার অযোগ্য। ২০১৯ সালে জুরাইনের এক বাসিন্দা ময়লাযুক্ত পানি নিয়ে ওয়াসা ভবনে গিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও তিনি তা গ্রহণের সাহস দেখাননি।
বাস্তবে ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি খাওয়ার অযোগ্য। রাজধানীতে পানিবাহিত রোগের অন্যতম উৎস ঢাকা ওয়াসার পানি। টিআইবির জরিপ অনুযায়ী, ওয়াসার পানির মান খারাপ থাকায় গ্রাহকদের পানি ফুটিয়ে পান করতে হয়। এ জন্য বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পোড়াতে হয় ।
ঢাকা ওয়াসার পানির মান এবং সেবার যখন এমন অবস্থা, তখন সংস্থাটি দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কার্পণ্য করে না। বাছবিচার ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দেয়। অথচ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতে জনভোগান্তি চরমে। এর ওপর ঢাকা ওয়াসা অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অরাজকতার এক বড় কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় পানির দাম বাড়িয়ে আবার ভোক্তার ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত জনবান্ধব নয়। রীতিমতো গণবিরোধী।


আরো সংবাদ



premium cement