বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে নজর দরকার
- ২৯ মে ২০২৪, ০০:০৫
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। ঘরবাড়ি সহায় সম্পদ উড়িয়ে নিয়েছে, মাছের ঘের তলিয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, রেমাল যতটা আঘাত হানার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিতে এটি উপকূলজুড়ে আছড়ে পড়েছে। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ ১১১ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হানে। এতে প্রস্তুতি ঘাটতি ও সতর্কতা গ্রহণের দুর্বলতা দেখা গেছে। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য যেসব পদক্ষেপ ও করণীয় তাতেও গাফিলতি দেখা গেছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নি¤œচাপের ফলে সৃষ্ট পানির ঝাপটাকে দুর্বল করতে উপযোগী। দক্ষিণের জনপদকে কেন্দ্র করে সেভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। যেগুলো হয়েছে সেগুলো সময়মতো প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় রেমাল ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।
জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে নানা মাত্রায় বিধ্বস্ত হয়েছে দেড় লাখ বসতবাড়ি। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার গ্রাম। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে সমুদ্রের লোনা পানি। এছাড়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, বিদ্যুৎলাইন বিধ্বস্ত হওয়াসহ ইন্টারনেট সংযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া এতে ২২ হাজার ২১৮টি ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্কের ১৫ হাজার ট্রান্সমিটার স্টেশন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে ১৯ জেলার ১০৭ উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। বাগেরহাট, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচরের অবস্থাও করুণ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিঝুমদ্বীপ। খবরে জানা যাচ্ছে, পুরো দ্বীপটি চার থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।
বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষতি বাড়িয়েছে বাঁধের ভাঙন। খবর আসছে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ শেষ মুহূর্তে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করেছে। ভাঙা অংশে বালুর বস্তা দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা করেছে। খুলনার পাইকগাছায় ২০টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমের বেশির ভাগ জেলায় নদীর বাঁধ ভাঙার চিত্র দেখা যায়। এগুলো যদি ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঠিক থাকত তাহলে শত শত গ্রাম বেঁচে যেত। মূলত এই কারণে মাছের ঘের ভেসে গেছে। বাগেরহাটে ২২ হাজার ঘের তলিয়ে গেছে। দক্ষিণ অঞ্চলে প্রায় সব জেলায় ঘের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একই কারণে বহু এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি জেলায় নগদ তিন কোটি ৮৫ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। বড় ধরনের দুর্যোগের পর এ ধরনের সাহায্য সামান্য বলতে হবে। বেসরকারি সংস্থাসহ নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূলীয় মানুষদের ক্ষতি লাঘবে এগিয়ে আসবে আশা করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তাদের পাশে থাকা।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় জনগণের জীবন জীবিকায় হুমকি বাড়ছে। তার ওপর এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের বেঁচে থাকাকে আরো কঠিন করে তোলে। এবারের ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাঁধভাঙাজনিত ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অথচ আগেই এগুলো সংস্কার করা যেত। তার পাশাপাশি উপকূলীয় অরক্ষিত এলাকাগুলো নতুন বাঁধ নির্মাণ এই আঘাতকে আরো সহনীয় করতে পারত।
আমরা আশা করি ক্ষতিগ্রস্তরা উপযুক্ত সাহায্য পাবেন। বিশেষ করে যারা বসতবাড়ি হারিয়েছেন তাদের ঘর নির্মাণে সহযোগিতা করতে হবে। যারা মাছের ঘেরসহ অন্যান্যভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদের পাশেও দাঁড়াতে হবে। এ থেকে আমাদের শিক্ষণীয়গুলোকে আগামীতে কাজে লাগাতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা