দাম বেঁধে দিয়ে সরকারের দায়িত্ব শেষ
- ২৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিত্যপণ্যের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতাসাধারণকে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও তা কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় সেভাবে বাড়ছে না। খাবারের তালিকা ছোট করেও এখন সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের পক্ষে। সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর পাইকারি থেকে খুচরা বাজার পর্যায়ে তদারকিতে জোর দিলে এমন অবস্থা হতো না।
বর্তমানে নিত্যপণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম কতটা ঊর্ধ্বমুখী, কয়েকটি জিনিসের মূল্যের দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়। যেমন- ডিমের হালি ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে ৫৫ টাকা হালিও বিক্রি হচ্ছে; যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা, আর তিন সপ্তাহ আগে ৪০ টাকা। বাজারে এখন মাছ-গোশতের দাম বেশ চড়া হওয়ায় আমিষের চাহিদা পূরণে ডিম ভরসা নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত তথা সীমিত আয়ের মানুষের। তবে পণ্যটির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যদিও প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দাম কমা-বাড়া নিয়ে আড়ত মালিক চক্রকে দায়ী করলেও কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু ডিম নয়, সব নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। অবস্থা এমন, ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি কেনার উপায় নেই।
এই যখন বাজারের অবস্থা তখন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) চলতি মাসে বাংলাদেশের খাদ্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, খানা জরিপ অনুযায়ী- ২০২২ সালে দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের খাবার কেনার খরচ ছিল প্রতি মাসে মাথাপিছু ১৮৫১ টাকা। গত দুই বছরে খাদ্যপণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে মাথাপিছু খাবার কেনার খরচ বেড়ে হয়েছে ২,৯২৩ টাকা; যা দুই বছর আগের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। ডব্লিউএফপি গত এপ্রিলে বাংলাদেশের খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব নিয়ে আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে ছিল; যা এর আগের মাসের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়েছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আর ৪৩ শতাংশ মানুষ বাকিতে খাবার কিনছে।
সরকারি ও বেসরকারি সব হিসাব বলছে, গত দুই বছরে দেশের মানুষের আয় বাড়লেও এ সময়ে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থেকেছে। সামগ্রিকভাবে দেশের প্রধান খাদ্যগুলোর দাম বেড়েছে। বিশেষ করে চাল, আটা ও আমিষের প্রধান উৎস মুরগির গোশত, ডিম, মাছ ও সবজির দাম বাড়তির দিকে। বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা, কাঁচামরিচ ও ফলের দামও। ফলে সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। অথচ সরকার কথিত উন্নয়নের কথা বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে নীতিনির্ধারকরা বিচলিত আছেন বলে মনে হয় না। থাকলে দেশে বাজার ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী কয়েকটি গোষ্ঠীর আধিপত্য বেড়ে যেত না। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার দাম বেঁধে দিয়ে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। বাজার অর্থনীতিতে এ ধরনের উদ্যোগ যে সুফল বয়ে আনে না তা হয়তো সরকারি কর্মকর্তাদের বোধে নেই। অথচ সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন সবার জানা, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক ও ন্যায্য করতে হবে। প্রভাবশালীদের অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা