২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি

উপকূলে বিরূপ প্রভাব

-


বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। অবস্থা এমন যে, দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। উপকূলীয় এলাকায় ভূমি ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপকূলের চার জেলার ৮-১৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
এভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে দেশের প্রতিবেশ-পরিবেশ। প্রকৃতির এ পাল্টে যাওয়া চেহারা উপকূলের মানুষ এখন দেখছেন প্রত্যক্ষভাবে। এটি তাদের অনেকের কষ্টের কারণ হয়ে উঠেছে। এই কষ্ট ভবিষ্যতে দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।
পক্ষকাল আগে প্রকাশিত তিনটি গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আইডব্লিউএফএম (ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট) ও সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) সম্প্রতি ওই তিনটি গবেষণা করে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অপ্রতিরোধ্য হওয়ায় উপকূলের প্রতিবেশব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা ও অবকাঠামোর ক্ষতি হতে পারে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে মানুষের জীবনযাপন ও কৃষির ওপর। এতে খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্কট ভবিষ্যতে বড় হয়ে দেখা দিতে পারে।

নদীর পানিপ্রবাহ, ঝড়ের গতি ও লবণাক্ততার তিনটি মডেল ব্যবহার করে সিইজিআইএসের গবেষকরা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরেছেন। দুই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটার বাড়লে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ৮ শতাংশ, ৬২ সেন্টিমিটার বাড়লে ১০ শতাংশ ও ৯৫ সেন্টিমিটার বাড়লে ১৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি কৃষির ওপর প্রভাব ফেলবে। ৫০-৯৫ সেন্টিমিটার পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ৬-৯ শতাংশের বেশি আমন ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গঙ্গা অববাহিকার উপকূলীয় প্লাবণ ভূমিতে লবণাক্ততা বাড়লে এসব এলাকার মানুষ সুপেয় পানির মারাত্মক সমস্যায় পড়তে পারেন।

বাংলাদেশ মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) দেশের মাটির অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দেশের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলায় লবণাক্ততা ছিল। ২০২৩ সালে আরো তিন উপজেলায় লবণাক্ততা বেড়েছে।
এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী? বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি রোধ করা আমাদের আয়ত্তের বাইরে। এর জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া দায়ী। এ নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো সোচ্চার হতে হবে আমাদের। তবে নিম্নগাঙ্গেয় উপত্যকার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের যতটুকু পানি প্রাপ্য, তার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছি। লোনা পানির প্রবাহ রোধ হতো, যদি মিঠা পানির প্রবাহ ঠিক থাকত। তাই পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটানের মতো দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
কিন্তু বর্তমানে আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে বহির্বিশ্বে বিদেশনীতিতে সরকারের যে কূটনৈতিক তৎপরতা তাতে বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা কতটুকু ভাবছেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কথা বলতে হচ্ছে এ জন্য যে, দুর্বল কূটনৈতিক পদক্ষেপে নিজেদের ন্যায্য হিস্যা আদায় করা সম্ভব নয়। যেমনটি হয়নি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে এবং ভারতের পানি আগ্রাসন মোকাবেলায়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement