২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সাদামাটির পাহাড়ে লুটপাট

প্রশাসন নির্বিকার

-


অবাধে মাটি উত্তোলনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেত্রকোনায় অবস্থিত দেশের বৃহৎ প্রাকৃতিক খনিজসম্পদ সাদামাটির পাহাড়। খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়স্থলে নিরাপত্তা চৌকি না থাকায় সম্পূর্ণ অরক্ষিত পুরো এলাকা। ফলে এ খনিজসম্পদ দীর্ঘদিন ধরে বাধাহীনভাবে লুটপাট করছে দুষ্টচক্র। মাটি উত্তোলনকারীদের স্বেচ্ছাচারিতায় এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
দৃষ্টিনন্দন সাদামাটি পাহাড়ের অবস্থান নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী সুসং দুর্গাপুর উপজেলায় গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষে বিজয়পুরে। বাংলাদেশের একমাত্র বৃহত্তম প্রাকৃতিক খনিজসম্পদ সাদামাটির পাহাড় এটি। এলাকাটি দর্শনীয় স্থান বা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় প্রতিদিন অগণিত পর্যটক আসেন।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বপ্রথম দু’টি সিরামিক কোম্পানি সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে সাদামাটি উত্তোলন শুরু করে। পরে আরো আটটি কোম্পানি ছাড়পত্র পায়। এসব কোম্পানি সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ না করে মূল্যবান সাদামাটি নিজেদের ইচ্ছেমতো উত্তোলনের নামে লুটে নিয়েছে। আর প্রভাবশালী চক্র স্থানীয় দালালের মাধ্যমে বছরের পর বছর ফ্রি স্টাইলে মাটি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
১৯৫৭ সালের খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থের এ খনিজ অঞ্চলের সাদামাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লাখ ৭০ হাজার টন, যা দেশের ৩০০ বছরের চাহিদা পূরণে সক্ষম। এলাকাটিতে ১৬৩টি সাদামাটির টিলা রয়েছে। ১৩টি কূপ খননের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টন মাটি উত্তোলন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ মাটি প্রাকৃতিকভাবে কেউলিন বা এলামিন সমৃদ্ধ।
অনিয়ন্ত্রিত মাটি উত্তোলনে সৃষ্টি হয়েছে গভীর খাদ। এতে প্রায়ই ঘটছে পাহাড় ধসের ঘটনা। মাটিচাপায় প্রাণহানিও ঘটেছে। হুমকিতে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর প্রশাসনের নজরদারির অভাবে মাটি লুটেরা চক্র ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব।

খনিজসম্পদ রক্ষার্থে ২০১০ সালে পাস হওয়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এবং সম্প্রতি হাইকোর্টের আদেশে যেকোনো ধরনের পাহাড় ও টিলা কাটা অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করা নিষিদ্ধ। তারপরও পাহাড় কাটা থামেনি। প্রশাসনের তদারকির অভাবে সিরামিক কোম্পানি ও প্রভাবশালী মহলের মাটি উত্তোলন অব্যাহত থাকায় বর্ষাকালে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আবাদি জমি ও রাস্তাঘাটসহ বহু বসতি বিনষ্ট হয়। মাটিচাপা পড়ে বিভিন্ন সময় অন্তত সাত শিশুসহ কমপক্ষে অর্ধশত শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। এক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটাই ভূমিধস ও মাটিচাপা পড়ে মৃত্যুর কারণ।
খনিজসম্পদ রক্ষায় এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় আন্দোলন, সংগ্রাম করলেও লাভ হয়নি। পাহাড়ধসের আশঙ্কায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই তাদের দিন কাটে। তবু প্রশাসন লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।
সাদামাটির যথেচ্ছ উত্তোলনে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই হাইকোর্টের আদেশে মাটি উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর যথাযথভাবে প্রতিপালন করে দেশের এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় উদ্যোগ নেবে এটিই প্রত্যাশিত।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement