২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কিরঘিজস্তানে বিপন্ন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা

দ্রুত ফিরিয়ে আনা দরকার

-

কিরঘিজস্তানে হামলার শিকার হয়েছেন বিদেশী শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশীও রয়েছেন। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যয়নরত। হামলার ঘটনায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। তারা দেশে ফিরতে চান। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে খবর আসছে। দেশটিতে পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আছেন ১৫ সহস্রাধিক। পাকিস্তান নিজেদের শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। বেশির ভাগ পাকিস্তানি দেশে ফিরে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিরঘিজস্তানে কোনো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হননি। এ বিবৃতি থেকে আভাস মেলে, বাংলাদেশীরা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। সে রকম দুঃখজনক ঘটনা ঘটার আগে ব্যবস্থা নেয়া কর্তব্য।
ঘটনা যতটুকু জানা যায়, তাতে সমস্যা হয়েছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় তরুণদের। প্রথমে মিসরীয় শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের মারামারি হয়। পরে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন।
সমস্যাটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে মিলে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ডা: জেরিত ইসলাম। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শিক্ষকরাও স্থানীয়দের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সতর্কতা নেয়া হয়েছে। তবে গণমাধ্যমের খবরে স্পষ্ট, পরিস্থিতি এখনো থমথমে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শঙ্কা কাটেনি। ওই এলাকার নিরাপত্তায় প্রায় দুই-তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দেশটিতে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে কিরঘিজস্তানের রাজধানী বিশকেক সফর করতে বলা হয়েছে। দূতাবাস অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি জরুরি যোগাযোগ নম্বর শেয়ার করেছে, যাতে কিরঘিজস্তানের বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে ওই নম্বরে যোগাযোগ করে সহায়তা চাইতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কিরঘিজস্তানে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সে দেশের সরকারের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ওই পর্যন্তই। বাস্তব কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি।
দেশের একজন নাগরিকও বিদেশে গিয়ে সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করা সরকারের দায়িত্ব। প্রয়োজনে সরকারিভাবে দ্রুত শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে, যেমনটি করেছে পাকিস্তান ও ভারত।
আমরা জানি, কিরঘিজস্তান মাত্র ৭০ লাখ জনসংখ্যার দেশ। কিন্তু সেখানে প্রায়ই রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার ঘাটতি দেখা যায়। অতীতে রাজনৈতিক কারণে পুলিশের গুলিতে শতাধিক এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।
এমন একটি দেশে আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। ডা: জেরিত জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই দেশে ফিরতে চান। তারা বিমানে বুকিংও দিয়ে রেখেছেন। পরীক্ষা শেষে যারা দেশে ফিরবেন তাদের জন্য ১২, ১৬ ও ২৬ জুন ফ্লাইটের বুকিং দিয়েছেন তারা। কিন্তু বর্তমান বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত বিমান চার্টার করে সব শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনা। সে রকম কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement