২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বোরো ধানে উৎপাদন খরচ উঠছে না

ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে প্রণোদনা দিন

-

সারা দেশে এ বছর বোরো ধানের খুব ভালো ফলন হয়েছে। ‘দেশের শস্যভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত হাওরাঞ্চল ও চলনবিল অঞ্চলে ধান কাটা প্রায় সম্পন্ন। তবে ধান উৎপাদনে খরচ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় কৃষক লাভবান হতে পারছেন না। উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। ধান চাষে ব্যবহৃত কৃষি উপকরণের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি এবং কৃষিশ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে। ফলে ধানের ফলন খুব ভালো হলেও হতাশা কাটছে না তাদের। এ দিকে প্রকৃত কৃষক সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে না পারায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সরকার উৎপাদিত ধানের মাত্র ৩ শতাংশ কেনে। বাকি ৯৭ শতাংশ ধান কেনে বেসরকারি চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ বছর বোরো মৌসুমে সরকার প্রতি মণ ধানের দাম এক হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে প্রতিফলন নেই। ব্যবসায়ী ও মিলমালিকদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল ধানের দর। লক্ষণীয়, কৃষকের যখন ধান থাকে, তখন বাজারে দর থাকে অনেক কম। ব্যবসায়ীদের গুদামে ধান মজুদ হলে এর মূল্য হু-হু করে বেড়ে যায়। এতে মিলমালিক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও কৃষক প্রতি বছর লোকসান গুনছেন। পরিণামে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ছেন।
গণমাধ্যমের খবর, এক বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদে পাঁচ কেজি বীজধানে খরচ এক হাজার ৮০০ টাকা। ৬০ কেজি ইউরিয়া সারে ব্যয় এক হাজার ৮০০, টিএসপিতে ব্যয় আড়াই হাজার, সেচব্যয় সাত হাজার ৬০০, মেশিনে জমি চাষ বাবদ খরচ পাঁচ হাজার টাকা হয়েছে। রোপণে খরচ পাঁচ হাজার, কীটনাশকে চার হাজার, আগাছা পরিষ্কারে চার হাজার ও ধান কাটায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া মাড়াইয়ে চার হাজার টাকা, ধান বিক্রি করতে বাজারে নিতে পরিবহন ব্যয়সহ সব মিলিয়ে খরচ ৪৬ হাজার টাকা। খুব বেশি ভালো ফলন হওয়ায় এবার বিঘাপ্রতি বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে সর্বোচ্চ ৪০ মণ। বর্তমানে বাজারে ৯০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করে ৪০ মণে কৃষক পাচ্ছেন ৩৬ হাজার টাকা। উৎপাদন ব্যয় ৪৬ হাজার থেকে বিক্রয়মূল্য ৩৬ হাজার বাদ দিলে বিঘাপ্রতি কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনো কৃষির সাথে জড়িত। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ধান উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষস্থানীয়। কৃষির এ অভাবনীয় সাফল্যের অংশীদার কৃষক, সরকার, কৃষি গবেষক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো হলেও তার সুবিধা থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের কৃষক। তাদের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে কৃষক দেশের চাহিদা মোতাবেক ধান উৎপাদন করে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। সেই কৃষক যদি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পান, এটি যেমন জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের, তেমনি দেশের কৃষির জন্য অশনিসঙ্কেত।
প্রতি বছর লোকসান গুনে গুনে কৃষির ওপর থেকে কৃষক একসময় আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। এ ক্ষেত্রে যদি ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কৃষক; তাহলে খাদ্য উৎপাদন যেমন বিঘিœত হবে তেমনি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে প্রয়োজনে সরকারকে এ খাতে প্রণোদনা দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement