২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
প্রধান নিশানা ইসলামী ধারার ব্যাংক

ব্যাংকব্যবস্থায় লুটপাট

-

আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থাকে নিশ্ছিদ্র বলা হয় এ কারণে যে, কেউ অর্থ গচ্ছিত রাখলে তা খোয়া যাওয়ার শঙ্কা থাকে না। সাথে সাথে ফেরত পান গ্রাহক। বিশ্বব্যাপী এর ওপর মানুষের আস্থা গড়ে উঠেছে। তবে আস্থা-নিরাপত্তার ধারণা যেসব দেশে সমান কার্যকর তা নিয়ে সংশয় আছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংকব্যবস্থাপনায় যে ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি হয়েছে সে কারণেই এ কথা বলতে হচ্ছে। বলা যায়, ব্যাংক খাতের অর্থিক অব্যবস্থাপনার দিক থেকে এটি বিশ্বে নজির হবে।
সংবাদমাধ্যমের খবর, একটি ব্যাংকের গ্রাহক গচ্ছিত অর্থ উঠাতে ম্যানেজারের পেছন পেছন ঘুরছেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকার চেক ব্যাংকটির কোনো শাখায় ভাঙানো যাচ্ছে না। এমনকি ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। ভেঙে ভেঙে মাসের বেতন দিতে হচ্ছে। ইসলামী ঘরানার ওই ব্যাংক বেশ কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনছে। খেলাপি ঋণের ভারে একেবারে খাদের কিনারে। খুইয়েছে মূলধন। হাতে এমন কোনো সিকিউরিটিজ নেই, যা বন্ধক রেখে নগদ অর্থ ধার করবে।

উল্লিখিত ব্যাংকটির দুরবস্থা মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়। তাতেও কাজ হয়নি। বাংলাদেশে ব্যাংকব্যবস্থাকে যখন ফতুর করে দেয়া হচ্ছিল তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ তদারকি সংস্থাগুলো কী করেছিল তার সন্তোষজনক কোনো জবাব নেই। ২০০৬ সালে এই ব্যাংকের উদ্যোক্তারা ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ ক্ষেত্রে ভুল তথ্য ব্যবহার করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সত্যিকার অর্থে লোপাট থামাতে চাইত তা হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। তা হলে হয়তোবা এই দীর্ঘ সময়ে এটি ঘুরে দাঁড়াতে পারত। সেটা দেখা গেল না, বরং বিগত দেড় যুগে অন্যান্য ব্যাংকের মতো এ ব্যাংককেও ফোকলা করা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন শাখার ওই ব্যাংকের গত কয়েক দিনের চিত্র একটি সহযোগী দৈনিকে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছেন না।

লুটপাটকারীরা যেন বিশেষভাবে নিশানা করেছে দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে এসব ব্যাংক থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরের তুলনায় ১০টি ইসলামী ব্যাংকের আমানত নতুন বছরে কমেছে আট হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে মজবুত ছিল ইসলামী ব্যাংকিং। বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিংয়ে এগুলো প্রচলিত সব ব্যাংক থেকে অগ্রসর ছিল। কিছু ব্যাংক ছিল অত্যন্ত ভালো। এখন এসব ব্যাংক প্রতিদিন নগদ অর্থ ধার করে চলছে। এমন করুণ অবস্থাতেও অস্বচ্ছ উপায়ে ঋণ বিতরণ করতে হচ্ছে এসব ব্যাংককে। গত জানুয়ারিতে এগুলো চার হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণ অনুমোদন নিয়ে আগের মতোই অস্বচ্ছতার অভিযোগ একইভাবে শোনা যাচ্ছে। এমন পেক্ষাপটে মনে হওয়া স্বাভাবিক, নিশানা করে একটি দুষ্টচক্র দেশের ইসলামী ব্যাংকিংকে ধসিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আমরা মনে করি, দেশে সুশাসনের অভাবে এমন লুটপাট হচ্ছে। তাই ব্যাংকব্যবস্থায় গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে হলে বেপরোয়া লুটপাট যে করে হোক রুখতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement