২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খাদ্যপণ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক

-

সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য নিরাপদ খাবার শুধু মানুষ নয়, প্রতিটি প্রাণীর জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশে প্রাণী দূরে থাক; মানুষের জন্যও নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং দিন দিন নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য দুর্লভ হয়ে উঠছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর অতিমুনাফার লোভে দেশে বিপুল খাদ্যপণ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হচ্ছে। এতে করে ভেজাল খাদ্যপণ্যে বাজার সয়লাব।
খাদ্য নিরাপদ রাখতে কাজ করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। এ দুই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে পণ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা। অন্য দিকে ভোক্তাদের অভিযোগ ও বাজারে অভিযান চালিয়ে ভেজাল পণ্য, দাম নিয়ন্ত্রণ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধ করতে কাজ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যে প্রচুর ভেজাল মেশানো হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল মেশানো ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তারা বিচার ও শাস্তির ঊর্ধ্বে থেকে যাচ্ছে বলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অভিযোগ রয়েছে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব, সেগুলো এ নিয়ে বেখবর। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ অনিরাপদ খাবার খেয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব দিন দিন বাড়ছে।
মাঠপর্যায়ে সঠিক ও নিয়মিত তদারকির অভাবে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খাদ্য তৈরি করছেন, যার একমাত্র লক্ষ্য অতিমুনাফা।
ভেজাল খাদ্য তৈরিতে রাসায়নিক থেকে শুরু করে ভারী ধাতব পদার্থের মতো এমন উপাদান মেশানো হচ্ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের অভিযান-পরবর্তী খাদ্যমান ও বিশুদ্ধতা যাচাই পরীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাদ্যে থাকা রাসায়নিক ও ধাতব পদার্থের প্রভাবে কিডনি-লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের মানুষ ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগে।
বিএফএসএ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার থেকে ৪৭ ধরনের খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে। এসব খাদ্যপণ্য ৬১টি মানদণ্ডে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষায় পাওয়া ফল অনুসারে ৩৪টি মানসম্মত ছিল। আর ২৭টিতে বিরূপ ফল পাওয়া যায়। এসব খাদ্যপণ্য সঠিক মানের ছিল না। অন্য দিকে ১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যে ভেজাল বা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে- পাউরুটি, গুড়, সস, গোশত, শুঁটকি, গুঁড়া দুধ, পাস্তুরিত তরল দুধ, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, কোমল পানীয়, আচার, মোরব্বা, জিলাপি, পানি, ফলের রস ও মধু। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক খাদ্যপণ্যের মান ঠিক নেই। অর্থাৎ, এসব খাদ্যপণ্য খাবার উপযোগী নয়।
আমরা মনে করি, ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে শুধু সচেতনতার চেয়েও বেশি জরুরি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। তা না হলে দেশের মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হতেই থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement