শিক্ষা কার্যকারিতা হারাচ্ছে
- ১৫ মে ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফলে বিপুল সাফল্য দেখা যাচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর জিপিএ ৫-এর ছড়াছড়ি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বৃহৎ অংশ জিপিএ হিসেবে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল করছে। অন্য দিকে মাঝারি ও নিচের দিকে ফলাফল ও ফেলের হার বহু কমে গেছে। এই অবস্থাকে অবশ্যই শিক্ষার ব্যাপক সাফল্য বলা যেত যদি ভালো পাসের ছাত্ররা উচ্চশিক্ষায় গিয়ে একই ধরনের ফলাফল বজায় রাখতে পারত। বাস্তবে দেখা গেছে, আগের তুলনায় ছাত্রদের যোগ্যতা উচ্চশিক্ষায় কমে গেছে। ভালো ফলাফল করা ছাত্রদের বড় একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছে। বাস্তব জীবনে শিক্ষার কার্যকারিতায় আগের কম ভালো ফলাফল করাদের চেয়ে তারা পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমরা বলতে পারি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায়ও একধরনের কসমেটিক অগ্রগতি হয়েছে, যা থেকে জাতি কোনো ধরনের লাভ পাওয়া দূরে থাক, ক্ষতির শঙ্কাকে বাড়িয়েছে।
এখন স্কুলে অর্থবহ কার্যকর শিক্ষা নেই। পুস্তকগুলো নানা ধরনের ভুলত্রুটিতে পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি একধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার বানানো হয়েছে। এ নিয়ে পৃষ্ঠা ধরে ধরে সমালোচনা করা যায়। দুঃখজনক হচ্ছে, আমরা শুধু ভালো ফলাফল করার আনন্দে সব যেন ভুলে যাচ্ছি। ফলাফল প্রকাশের দিন সংবাদমাধ্যমে জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নাচ-গান মিষ্টি বিতরণ দেখা যায়। এর মধ্যে এমন ছাত্রদের বেশি দেখা যায় যারা এত ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করে না। এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরও এমন চিত্র দেখা গেল। এক ছাত্রীর বক্তব্য, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সে জানাচ্ছে, এমন ভালো ফলাফল করবে, ধারণাও করতে পারেনি। তার জন্য সাধারণ পাস মেলানোই বিশাল ব্যাপার ছিল। কারণ সে টিকটক করে, আড্ডা, হাসি-তামাশায় তার সময় ব্যয় করে। স্কুলের পড়াশোনায় তার আগ্রহ নেই।
ভালো ফলাফলের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ অধ্যবসায় লাগে। এখন দেখা যাচ্ছে, যাদের শুধু পাস করার ভয় আছে তারা সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোনো গলদ আছে কি? না ঢুকে পড়েছে কোনো ষড়যন্ত্রকারীর দল? তারা যাকে তাকে ভালো ফলাফল দিয়ে শিক্ষা ধ্বংস করে দিচ্ছে। ক্লাসে পশুপাখির আচরণ অনুকরণ করতে শেখানো হয়। যাপিত জীবনে এই প্রজন্মের একটা বড় অংশের মধ্যে অবক্ষয় আঁচ করা যায়। তারা পড়াশোনা করার কোনো আগ্রহ পায় না। এ ছাড়া বইয়েও সে ধরনের সারগর্ভ কিছু নেই। এখন শেখানো হয়, কিভাবে ঘরদোর পরিষ্কার করতে হবে, কিভাবে আলুভর্তা-খিচুড়ি বানিয়ে সেটি পরিবেশন করতে হবে। এ ধরনের উদ্ভট উদ্দেশ্যহীন অনুশীলন দিয়ে ছাত্রদের ব্যস্ত করে ফেলা হয়েছে। বিজ্ঞান, গণিত ও ভাষা শিক্ষার সময় তাদের নেই। কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছাত্রদের মধ্যে এ বিষয়ে উপযুক্ত যোগ্যতা নেই।
আবার দেখা যায়, একটি শ্রেণী হতাশায় পড়ে যাচ্ছে। ভালো ফলাফল না করার কারণে আত্মহত্যা করে বসছে। কারণ জিপিএ পাওয়াই এখানে সব। এই হতাশাকে বাড়িয়ে দেয় যখন তাদের কথিত ভালো ফলাফল পরে আর কোনো কাজে না লাগে। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারাও একটি কারণ। এবার এক লাখ ৮২ হাজারের বেশি ছাত্র জিপিএ ৫ পেয়েছে। সারা দেশে সব মিলিয়ে ভালো কলেজের আসন কয়েক হাজার মাত্র। বুয়েট, মেডিক্যাল ও ভালো বিশ্ববিদালয়গুলোতে মূলত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুযোগ পায়। ভালো ফলাফলের সাথে উচ্চশিক্ষার আসন থাকার বিষয়টি সরকারের মাথায় নেই। বেশিসংখ্যক ছাত্রের এই উচ্চ ভালো ফল মূলত দেশ জাতি এমনকি ব্যক্তির নিজেরও কোনো কাজে আসছে না।
একটি ভালো প্রজন্ম পেতে হলে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে তার ভিত্তি গড়ে দিতে হবে। বিগত এক যুগের বেশি সময় শিক্ষার এই স্তরে ক্রমাগত ক্ষয় হয়েছে। এ সময় পরীক্ষা না দিয়ে পাসের ঘটনাও ঘটেছে। আমরা আসলে অন্তঃসারশূন্য এক জাতি গড়ে তুলছি। এদের থেকে ভালো একটি কিছু আশা করা হবে বোকামি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা