২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কিডনি ছিনতাই চক্র সক্রিয়

কঠোর হাতে দমন করতে হবে

-

ভালো চাকরির লোভে ভারতে গিয়ে কিডনি হারিয়েছেন রবিন নামের এক ব্যক্তি। দুর্বৃত্ত চক্রের হাতে বন্দী হয়ে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হন অভাবী এ যুবক। পরে তার চেষ্টায় পুলিশ দুর্বৃত্ত চক্রের সন্ধান পেয়েছে। গ্রেফতার করেছে তিনজনকে। পুলিশের তথ্যমতে, চক্রটি এর মধ্যে অন্তত ১০ জনকে ফাঁদে ফেলে কিডনি ছিনিয়ে নিয়েছে। পুলিশ জানায়, ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকেন্দ্রিক কিডনি কেনাবেচা চক্রের সদস্যরা ভারতের দিল্লি, গুজরাট, কলকাতা ও রাজস্থানে সক্রিয়। এ ছাড়া তাদের দালাল ছড়িয়ে আছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু গ্রুপ তৈরি করে তারা অভাবী ও সহজ সরল মানুষকে লোভের ফাঁদে ফেলে ভারতে নিয়ে যায়, তারপর কৌশলে, এমনকি অস্ত্রের মুখে অসহায় করে কিডনি ছিনিয়ে নেয়।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের অপরাধ চক্রের যোগাযোগ বহু পুরনো। শুধু কিডনি ছিনিয়ে নেয়া নয়; নারী ও শিশু পাচারসহ মাদকদ্রব্য পাচার করে আনা এবং সীমান্তে চোরাচালানের বিপুল কর্মকাণ্ডে জড়িত অপরাধীরা ভারতের অপরাধচক্রের সাথে মিলেমিশে কাজ করে। বাংলাদেশের জন্য এ অপতৎপরতা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। কিন্তু এ নিয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা যেমন অপ্রতুল তেমনি রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের সদিচ্ছাও অস্পষ্ট।
২০২০-২১ সালে বাংলাদেশী এক তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশে নারী পাচারের ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তখন স্পষ্ট হয়ে যায়, নারী পাচার বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তখন মিডিয়া রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, এর আগের ১০ বছরে ভারতে পাচার হওয়া প্রায় দুই হাজার নারীকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনেছে একাধিক মানবাধিকার ও সামাজিক সংস্থা। তবে নারী পাচারবিষয়ক কোনো তথ্য তখন পুলিশ জানাতে পারেনি। তবে ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত নারী পাচারের ঘটনায় দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় সাত হাজার মামলা হয় বলে পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায়। পাচার করা নারীদের ভারতে নিয়ে বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়া হতো। মূলত তাদের যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়।
যাই হোক, কিডনি ছিনতাই চক্রের বিষয়েও পুলিশের কাছে কোনো তথ্য যে ছিল না তা স্পষ্ট।
বাংলাদেশে কিডনি বেচাকেনা নিষিদ্ধ। শুধু নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে কিডনি নেয়ার বিধান আছে। তবে নিকটাত্মীয়ের বাইরেও মানবিক ও সহানুভূতিশীল যে কেউ চাইলে কিডনি দান করতে পারবেন- এমন একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
অবশ্য, রবিনের কিডনি ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে দেশে কিডনি-সম্পর্কিত আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি অপরাধমূলক তৎপরতার অংশ। এ বিষয়ে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করাই সবচেয়ে বেশি জরুরি, যাতে তারা চাকরি বা অন্য কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে বিপদে পড়ার ঝুঁকি না নেয়। এটি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে আগ্রহী তরুণ-যুবাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। লোভে পড়ে তাদের অনেকে বিপদের মুখে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement