২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকা

শিক্ষার মান নিয়ে সংশয়

-

দেশে শিক্ষাব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। কিন্তু শিক্ষার্থী অনুপাতে দেশে এখনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। আবার যতগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পুরনো ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়ার সুযোগই নেই। ওগুলো চলছে কোনো কলেজের শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয় ভবনে ও ভাড়া করা জায়গায়। ফলে নানা সমস্যায় জর্জরিত এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নতুন গড়ে ওঠা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। কবে নাগাদ স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেসব প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বিপুল টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরকার যেখানে আর্থিক চাপে রয়েছে, সেখানে বিপুল ব্যয়ের এসব প্রকল্প কবে অনুমোদন পাবে, কবে স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে- তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হয়। ইউজিসি স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বারবার তাগাদা দেয়। নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যেতে পারলে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ কারণে পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমন কোনো নিয়ম নেই।
শিক্ষার জন্য নিজস্ব উদ্যোগে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা ‘যেনতেনভাবে’ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ করছেন, কার্যত ঠকছেন।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোর পাশাপাশি একটি সাধারণ সমস্যা হলো, সেগুলোতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব প্রকট। শিক্ষকরা বেশির ভাগ নতুন নিয়োগ পাওয়া। আসলে নামে এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অবস্থা এমন যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের শিক্ষার সুযোগ থাকা দরকার, তার কিছুই নেই এসবে। পুঁথিগত পড়াশোনা হলেও ব্যবহারিক শিক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। বলা যায়, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ও মানসম্পন্ন পাঠদান অগ্রাধিকারে নেই। একটি সহযোগী দৈনিকে এ নিয়ে গত বুধবার একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
ইউজিসির তথ্যমতে, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫৫টি। অনুমোদন (আইন) হয়েছে আরো ছয়টির। এর মধ্যে ২০১৩ সাল ও তার পর থেকে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ কৃষি, মেডিক্যাল, ডিজিটাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য দিকে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৪টি।
কোনো নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পর ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দেয়া হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনোটিতে নিয়োগের নামে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনোটিতে ভূমি অধিগ্রহণেও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে।
লক্ষণীয়, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের আইন পাসের পর বিভিন্ন বিভাগে যেনতেনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দেয়া হয়। তারপর আবার নতুন নতুন বিভাগ চালুর তোড়জোড় শুরু হয়। নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন হওয়ার পরপর ভাড়া করা বাড়ি বা যেখানে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সুযোগ বন্ধ করতে ইউজিসি একটি নীতিমালা করেছে। বছরখানেক আগে এটি ইউজিসির সভায় অনুমোদন দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে তা এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি।
শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, চাহিদা অনুযায়ী নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ থাকা জরুরি। এ জন্য দরকার শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগে অবকাঠামোগত ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্য জনবল নিশ্চিত করা। তবে এ ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা জরুরি, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে হবে না, ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগসহ অন্যান্য অ্যাকাডেমিক সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। না হয় ভালো মানের শিক্ষা সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement