২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নীতি প্রণীত হয় দুর্নীতি পোষণে

ঋণনির্ভর অর্থনীতিতে দেশ খাদের কিনারে

-

ঢাকা ফোরামের একটি সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা খোলামেলাভাবে দেশের মূল সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ঋণনির্ভর অর্থনীতি দেশকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে। জবাবদিহিশূন্য রাজনীতি এবং দুর্নীতি পোষণের উদ্দেশে নীতি প্রণয়নে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে তা নিয়েও দেখা দিচ্ছে সন্দেহ সংশয়।
ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্র পরিচালনার বৈশিষ্ট্য নিয়ে এতটা স্পষ্ট ভাষায় সচরাচর কেউ কথা বলেন না। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এটি ঘটেছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, এখন সব কিছু ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিবেকের তাড়নায় তারা ভয়ভীতি উপেক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
সেমিনারে বলা হয়, দুর্নীতি এখন আমাদের সিস্টেমে (ব্যবস্থাপনায়) যুক্ত হয়ে গেছে। দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। ব্যাংক খাতে নীতি তৈরি করা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো দুর্নীতি করতে।
এসব কর্মকাণ্ড যে কেবল এখনই শুরু হয়েছে এমন নয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার বাস্তবায়ন শুরু করে। আর সে অ্যাজেন্ডা হলো ক্ষমতাসীনদের প্রত্যেকের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে যা কিছু করণীয় সব করা। এ জন্য সবার আগে বিরুদ্ধ মত স্তব্ধ করার ব্যবস্থা করা হয় আইনশৃঙ্খলা ও পেটোয়াবাহিনী দিয়ে। কণ্ঠরোধে নানা রকম আইন প্রণয়ন করা হয়। বিরোধী গণমাধ্যম বন্ধ করা বা আর্থিকভাবে সেগুলো অস্তিত্বহীনতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। দলীয় স্বার্থবাদী গোষ্ঠীকে দেয়া হয় আইনের ঊর্ধ্বে রাখার নিশ্চয়তা। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আইন করে সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেয়া হয়।
ঢাকা ফোরামের সেমিনারে কেউ বলেছেন, গত ১৫ বছরে উন্নয়নের অর্থায়ন হয়ে পড়েছে ঋণনির্ভর। উন্নয়ন খরচের অদক্ষতা অনেক বেড়েছে। ঋণনির্ভর উন্নয়ন আমাদের ব্যবস্থাপনায় একীভূত হয়ে গেছে। আর অদক্ষতা ও জবাবদিহিতে ধস নেমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এগুলো অদক্ষ অর্থনীতির কু-শাসন।
কেউ বলেছেন, অর্থনীতি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে তা সাধারণ মানুষও বোঝেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের দুর্ভাগ্য হলো- একটি গণতন্ত্রহীনতা ও কায়েমি স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে বের হতে কী উপায় আছে তা বিরোধী রাজনৈতিক দল বলছে না। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ক্ষমতায় বহিঃশক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে রাজনীতিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বড় ভূমিকা আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন দেশে একজনই সব। মানে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে তারাই সব করবেন। এটি হওয়ার কারণে কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি অর্থনীতির অবস্থা এই হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির পলিসিগুলোর কোনো সমন্বয় নেই। সরকার ঋণনির্ভর উন্নয়ন বাস্তবায়ন করছে। ঋণনির্ভর অর্থনীতি দেশকে খাদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
একজন কূটনীতিবিদ বলেন, সরকার আইয়ুব খানের নীতিতে চলছে। দেশে এখন অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অর্থনীতির ক্ষয় চলবে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট, রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতাসীনরা মোটেও সফল নন। অনেকের বিবেচনায়- যতক্ষণ পর্যন্ত এ সরকার ক্ষমতায় থাকছে ততক্ষণ রাজনৈতিক সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল