কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিতে ঘাটতি
- ০৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
সুন্দরবনের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে আগুন লেগেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দু’দিন আগে এর সূত্রপাত হতে পারে। তবে এবার প্রথম নয়, বিগত বছরগুলোতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বনভূমিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সে হিসেবে আমাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যে প্রস্তুতি থাকার কথা তা অনুপস্থিত।
লক্ষণীয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী বনে বড় ধরনের দাবানলের ঘটনা ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা যখন বাড়ছে; তখন দাবানল আরো শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গত কারণে আমাদের মনে রাখা আবশ্যক, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে এর বহুমাত্রিক গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় রাখা দরকার।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের একটি টহল ফাঁড়ি থেকে গত শনিবার সকাল ১০টায় আগুন প্রথম নজরে আসে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বনের বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। লতিফের ভিলা নামের এ জায়গায় বিস্তার হওয়া আগুনের পরিধি কয়েক কিলোমিটার হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি ছিটাতে পারেনি। অন্ধকারে হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণের ঝুঁকি থাকায় রাতে অভিযান স্থগিত রাখা হয়। গতকাল রোববার থেকে সুন্দরবনের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার থেকে ছিটানো হচ্ছে পানি। গণমাধ্যমে প্রকাশ, আগুনের কারণে ভীতসন্ত্রস্ত বনের প্রাণীরা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আগে থেকে বনের প্রাণী ও প্রতিবেশ রক্ষা করা যাচ্ছে না। কাঠ কেটে, বন্যপ্রাণী হত্যা করে, অতিরিক্ত মাছ ও জলজপ্রাণী আহরণ করে এমনিতে বিপর্যস্ত সুন্দরবন। যেমন পরিবেশ থাকা দরকার তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। এ অবস্থায় বাড়তি উৎপাত হিসেবে হাজির আগুনের ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে বনের এ এলাকায় চারবার আগুন লাগে। গত কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। ওই এলাকায় সুন্দরী, বাইন, গেওয়া, জিন, সিংড়াসহ গুল্মজাতীয় গাছ বেশি। তার ওপর শুকনো পাতা বিস্তীর্ণ জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
আগুন লাগা সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশের বর্ণনা এসেছে গণমাধ্যমে। এলাকাটি বেশ খানিকটা উঁচু। এখানে আশপাশে পানির উৎস নেই। নিকটস্থ পানির উৎস আড়াই কিলোমিটার দূরে। আশপাশের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াই এর কারণ। পড়েছে শুকনো পাতার আস্তরণ। আগুন লাগার ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছতে সময় লাগা এবং একদিন পরে পানি ছিটানোর যে খবর পাওয়া যাচ্ছে; তাতে সুন্দরবন নিয়ে সরকারের যথেষ্ট মনোযোগ না থাকার বিষয়টি পরিষ্কার। অন্যটি হচ্ছে আগুন লাগার কারণ নিয়ে যথেষ্ট অবগত না থাকা। কেন সেখানে বারবার আগুন লাগছে; এর উত্তর জানা যাচ্ছে না। স্বার্থান্বেষী কোনো মহল কোনো সুবিধা পেতে গর্হিত কাজটি করছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। আগের ঘটনাগুলোর ঠিকঠাক তদন্ত হলে তার প্রস্তুতি দেখা যেত। কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ দেখে মনে হয় তারা অপ্রস্তুত।
দাবানল বিশ্বব্যাপী বনভূমি উজাড় করছে। উন্নত দেশগুলোতে এ জন্য জোরালো প্রচেষ্টা থাকে। সমুদ্র থেকে পানি বিমানে করে নিয়ে তা ছিটিয়ে দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। সুন্দরবনে লাগা আগুন দাবানলের মতো এত তীব্র হয়নি। তার পরও আমরা একে মোকাবেলায় সফলতা দেখাতে পারছি না। প্রত্যাশা, এবার গুরুত্ব দিয়ে একটি তদন্ত হবে। কেন আগুন লাগছে? কিভাবে মোকাবেলা করা যায়; এর একটি টেকসই পরিকল্পনা বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন নেবে। ফলে রক্ষা পাবে বন্যপ্রাণী এবং মূল্যবান বনজসম্পদ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা