কর্মসংস্থানের অনুকূল পরিবেশ দরকার
- ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রবাসী আয় অর্থনীতির কোনো টেকসই খাত হতে পারে না। আমাদের শ্রমিক রফতানির ইতিহাস প্রতিনিয়ত তা-ই যেন জানান দিচ্ছে। তরুণরা প্রতারিত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কেউ মূল্যবান সহায় সম্পদ হারিয়ে, কেউবা জীবন দিয়ে এর প্রমাণ দিচ্ছেন। এরপরও প্রবাসী আয় নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা হয়। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা ও প্রচার রয়েছে, কিন্তু আড়ালে যে এর এক করুণ চিত্র লুকিয়ে আছে; সেটা সামনে আসে কম। সর্বশেষ খবর হলো বিদেশে যেতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে লাশ হয়ে ফিরল আটজন। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা দেশের মানুষের এমন দুরবস্থা মেনে নিয়েছে। অনেক কিছু করার থাকলেও চোখ বন্ধ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
ঘটনার ভুক্তভোগীরা সবাই ইউরোপে যাওয়ার প্রত্যাশী ছিল। এরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছিল ইতালির উদ্দেশে। খবরে প্রকাশ, দালালরা প্রত্যেকের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেছে। তাদের একজন মাদারীপুরের মামুন শেখ। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন তিনি। তাকে দুবাই হয়ে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এজন্য দিতে হয় ১৩ লাখ টাকা। অন্য একজন ভুক্তভোগী সজল বৈরাগী দালাল চক্রকে প্রথমে দেন ১৪ লাখ টাকা। দুবাই গেলে এই চক্রকে আরো সাড়ে ছয় লাখ টাকা পাঠায় তার পরিবার। এভাবে প্রত্যেকের কাছ থেকে নানাভাবে অর্থ আদায় করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবৈধভাবে ইউরোপে যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে বাংলাদেশীদের। প্রতি মাসে খবর রয়েছে তারা দুর্ঘটনায় পড়ছেন। এর মধ্যে শতাধিক প্রাণ গেছে। অবৈধভাবে এ পথে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে আটক হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি বাংলাদেশী। আদমপাচারকারী চক্র রাস্তার প্রতিকূলতাকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। বিশেষ করে আফ্রিকার বিপদসঙ্কুল পথে পণবন্দী করে দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। এজন্য তারা নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। নির্মম নির্যাতনের বহু চিত্র সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তার পরও একশ্রণীর তরুণ অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পণবন্দী করে পাচারকারী চক্র অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে।
সর্বশেষ ঘটনাটিতে জানা যাচ্ছে, নৌকাটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ ৩০ জন। তাতে ৫২ জনকে উঠানো হয়। ওই আটজনকে নৌকার পাটাতনের নিচে রাখা হয়েছিল। অক্সিজেন সঙ্কটে শ্বাস নিতে তাদের কষ্ট হওয়ায় সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। দালালরা তাদের মারধর করে জোরপূর্বক পাটাতনে ফিরিয়ে দেয়। উপর্যুপরি নির্যাতন ও অক্সিজেন স্বল্পতায় পাটাতনের ভেতর প্রাণ হারান তারা।
প্রবাসী আয় ২২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলা যায় প্রবাসীর পাঠানো অর্থ। বাস্তবে যারা এই অর্থ উপার্জন করছেন তাদের নিরাপত্তার কথা কিছুমাত্রও ভাবা হয় না। ভূমধ্যসাগরে ক্রমাগত বাংলাদেশীদের প্রাণ হারানো তার নমুনা। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ এ কাজে সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে সক্রিয় হলে আদমপাচারকারী চক্রের কাছে কাউকে পণবন্দী হতে হয় না। এছাড়া প্রবাসীরা পদে পদে অবহেলিত নির্যাতিত। তারা প্রথম যখন বিমানবন্দরে ঢোকেন তাদের সম্মান দেয়ার বদলে হেনস্তা করা হয়। হাজারো অভিযোগের পরও প্রবাসীদের প্রতি আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তরুণরা দেশে কাজের সুযোগ পেলে এভাবে বেপরোয়া বিদেশে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গল্প সরকার করতে চায় তার বাস্তব ভিত্তি নেই। আমরা মনে করি, প্রবাসে যাওয়ার বেপরোয়া প্রবণতা রোধের চিন্তা করতে হবে। আদমপাচারকারী চক্রের বিহিত করার পাশাপাশি দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের সহজ সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে একজন তরুণ প্রথমে দেশে কিছু করতে উৎসাহিত হতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা