২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সুন্দরবনে প্লাস্টিক দূষণ

পরিবেশ রক্ষা জরুরি

-

বাংলাদেশে প্রাণ ও প্রকৃতির ওপর অনাচার কেবলই বাড়ছে। দেশে প্রয়োজনীয় বনভূমি নেই। যতটুকু আছে সেটুকুও রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক বনের বেশির ভাগ আমরা উজাড় করে ফেলেছি। যতটুকু বাকি রয়েছে তাও দ্রুত কমছে। এর মধ্যে সুন্দরবন একটি। নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি যেন একখণ্ড সবুজ এলাকা। আমাদের সরবরাহ করছে অক্সিজেন। সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে আমরা এই বনাঞ্চল রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছি। বেআইনিভাবে গাছপালা কেটে উজাড় করছি, বিষ ছিটিয়ে মাছ মারছি, বাণিজ্যিক নৌযান চালিয়ে পরিবেশ দূষণ করছি।
সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, বনে ব্যাপক প্লাস্টিক দূষণও হচ্ছে। এর ফলে সেখানকার পশুপাখি ও জলজ প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদ ২০২০ থেকে ২০২২ সালে সুন্দরবন উপকূলে ওই গবেষণা চালান। সুন্দরবনের ছয়টি এলাকা থেকে মাটি ও পানির নমুনা নেন তারা। তাতে দেখা যায়, প্রতি লিটার পানিতে গড়ে দু’টি মাইক্রো প্লাস্টিক এবং প্রতি কেজি মাটিতে গড়ে ৭৩৪টি মাইক্রো প্লাস্টিক রয়েছে। এতে করে গায়ে পলিথিন জড়িয়ে মারা যাচ্ছে কচ্ছপ। স্থলভাগে পরিত্যক্ত পলিথিন খেয়ে বিপন্ন হচ্ছে বানরসহ অন্য অনেক প্রাণী। শ্বাসমূলে আটকে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলজপ্রাণী। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শুশুক বা ডলফিন জেলিফিশ মনে করে পলিথিন খাচ্ছে। খাদ্য হিসেবে মাছের পেটে চলে যাচ্ছে প্লাস্টিক কণা। এতে মাছসহ জলজপ্রাণীর জীবনচক্রে ঢুকে পড়ছে প্লাস্টিক তন্তু। একদিকে এটি জলজপ্রাণী প্রজাতির জীবনের ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো- মাছের মাধ্যমে এটি মানুষের খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ছে। সুন্দরবন দূষণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে জাহাজ দুর্ঘটনায় সুন্দবনের নদীতে কয়লা ও তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
সুন্দরবনে পর্যটনও বেড়েছে। প্লাস্টিক দূষণের অন্যতম কারণ এই পর্যটন। পর্যটক ও বনজীবীরা বনের ভেতরে পরিবেশ রক্ষার নীতি মেনে চলেন না। তারা চিপস, চানাচুর, পানির বোতল, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের পলিথিনজাত মোড়ক যত্রতত্র ফেলেন। সুন্দরবনের সংলগ্ন এলাকাজুড়েও পলিথিন দূষণ হচ্ছে। বাইরের দূষণও বনের ভেতরে বিস্তার ঘটছে। বনসংলগ্ন ৮০টি গ্রাম এ ধরনের দূষণের উৎস। এখানে রয়েছে ৫২টি নদী-খাল, সেগুলো বেয়ে তা চলে যাচ্ছে বনের ভেতরে। বন বিভাগ ২০২৩ সালে বনে প্লাস্টিক পরিবহন নিষিদ্ধ করে। বাস্তবে এর কার্যকারিতা নেই।
জাতীয়-আন্তর্জাতিক আইনে সুন্দরবনকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সেই অর্থে এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এর পরিবেশ রক্ষা করা কর্তব্য। তার চেয়ে বেশি দরকার আমাদের জাতীয় স্বার্থে একে সংরক্ষণ। আমরা আশা করব, প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে কর্তৃপক্ষ বিশেষ নজর দেবে। সেখানে পর্যটন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইতোমধ্যে যতটা ক্ষতি হয়েছে তার ওপর একটি সামগ্রিক জরিপও হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement