লোকসান আতঙ্কে চাষিরা
- ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। দেশের পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় এই জেলায়। পেঁয়াজ আবাদ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এবার পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দেশী পেঁয়াজের দরপতনের দরুন চাষিরা লোকসান আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নয়া দিগন্তের বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতার বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে চার হাজার টাকায়। মার্চের মাঝামাঝি প্রতি মণ পেঁয়াজ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সে পেঁয়াজ মাত্র এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় পাবনার হাট-বাজারে দেশী পেঁয়াজ কমে গেছে। কৃষকরা পেঁয়াজ সরবরাহ কমিয়ে দিলেও পাইকাররা বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছেন না। তাদের দাবি, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় লোকসান আতঙ্কে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বড় মোকামগুলোর ব্যবসায়ীরা দেশী পেঁয়াজ ক্রয় কমিয়ে দিয়েছেন। একজন পাইকার ২০০ থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ কিনতেন। সেখানে এখন কাশিনাথপুর হাটে ২০ থেকে ২৫ মণ কিনছেন। কাশিনাথপুর হাটে কয়েকজন কৃষক বলেন, ভরা মৌসুমে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় আমরা হতাশার মধ্যে। প্রতি মণ পেঁয়াজ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। সেজন্য হাটে তেমন পেঁয়াজ আনা হয়নি। ঈদে কেনা-কাটায় কিছু পেঁয়াজ আনা হয়েছে। টলটের কৃষক কামাল বলেন, মাত্র ২০ দিন আগেও প্রতি মণ পেঁয়াজ দুই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। কিছু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অজুহাতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দিয়েছে যাতে তারা কম দামে পেঁয়াজ কিনে গুদামজাত করতে পারে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পাবনায় দুই জাতের পেঁয়াজ হয়। আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ। আরেকটি মৌসুমি বা হালি পেঁয়াজ। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ টন। আগাম জাতের পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। হালি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬০ হাজার টন। ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন সাড়ে আট লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন। এ পেঁয়াজ বাজারে আসছে।
গত ৪ এপ্রিল কাশিনাথপুরে পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় মোকামগুলোতে চাহিদা কম। এজন্য যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ কিনতাম; সেখানে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ কেনা হয়েছে। আমদানি কম। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করায় কৃষকরা পেঁয়াজ কম আনছেন। ফড়িয়া ছাত্তার ব্যাপারী বলেন, আমরা যারা ছোট ব্যবসায়ী তারা ৫-১০ মণ করে পেঁয়াজ কিনেছি। শেষে এই পেঁয়াজ আমরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। চাহিদা না থাকায় পাইকাররাও পেঁয়াজ নিচ্ছেন না।
সানাউল্লাহ নামের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, কৃষকদের কাছ থেকে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কিনে ঢাকার পাইকারি বাজারে এক হাজার ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে পরিবহন খরচ বেশি থাকায় পেঁয়াজের ব্যবসায় করে লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে দাম না বাড়লে কৃষক পর্যায়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বাড়বে না বলে জানান তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কৃষকদের কেজিপ্রতি ৪০ টাকার মতো খরচ হয়। যদি ৪০ টাকার কমে দাম হয়, তাহলে কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করবে না। তারা দেশী পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে দাম বাড়লে, তখন বিক্রি করবে।
পেঁয়াজ পচনশীল মসলাজাতীয় ফসল। এটা বিক্রি করে দেয়াই ভালো। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সাথে পেঁয়াজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ দাবি করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা