কারণ অনুসন্ধান জরুরি
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
দেশের চারটি জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মের সময় ১৮ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে আটজন, সিলেটে তিনজন, কুমিল্লায় পাঁচজন। আর রাজশাহীতে মারা গেছেন দুই মা। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে হাসপাতালে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একটি জাতীয় দৈনিকের খবর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আমাদের দেশে একসময় সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে ছিল। কিন্তু গণজনসচেতনতা ও চিকিৎসাব্যবস্থায় উন্নতি হওয়ায় এসব মৃত্যু বহুলাংশে কমে এসেছে। ফলে দেশের মানুষের গড় আয়ু অনেক গুণ বেড়েছে। কিন্তু বিগত দুই-তিন মাসে বেশ কয়েকজন প্রসূতি সন্তান জন্ম দেয়ার সময় হাসপাতালে মারা যাওয়ায় একটি অজানা শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কেন সন্তান জন্মে অস্ত্রোপচারের পর রোগী মারা যাচ্ছে? কারণ অন্য অস্ত্রোপচারের রোগীদের এ সমস্যা হচ্ছে না। যেসব রোগী মারা গেছেন, তাদের বেশির ভাগের কিডনি ফেল করেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ দুই দশকের বেশি ধরে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে। সব সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পাওয়া যায় না বলে বাড়িতে সন্তান প্রসবে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। দিন দিন বাড়িতে সন্তান প্রসব কমেছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব মতে, এখন ৩৩ শতাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। বাকি ৬৭ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে এসে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা মানুষের মধ্যে সেবাকেন্দ্রে আসার ব্যাপারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মাতৃস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিককে স্ত্রীরোগ ও মাতৃস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা বলেন, ‘হাসপাতালে মানুষ নিরাপদ প্রসবের জন্য আসে। আমরা চিন্তিত এ কারণে যে, পরপর বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটল হাসপাতালে। মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যাচ্ছে না। আমরা কিছু সাধারণ লক্ষণের কথা জানতে পেরেছি। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে জেনেছেন, যেসব হাসপাতালে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেসব জায়গায় প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ অবেদনবিদ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও শল্যচিকিৎসক ছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, তারা সবাই ভুল করছেন? অন্য দিকে চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ত্রোপচারের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রসূতির প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া সাধারণ লক্ষণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ কিডনি অকেজো হয়ে পড়ছে। কারো শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। প্রায় সবাই মারা গেছেন আইসিইউতে।
জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘প্রসবে অস্ত্রোপচার একটি জীবনদায়ী ব্যবস্থা। সেখানে মায়ের জীবন চলে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং একই সাথে গভীর উদ্বেগের বিষয়। মায়ের জীবন রক্ষায় সম্ভাব্য সব কিছু করার উদ্যোগ নিতে হবে।’
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতো আমরাও মনে করি, এতগুলো মায়ের সন্তান জন্ম দেয়ার সময় হাসপাতালে মারা যাওয়ার বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ার কোনো অবকাশ নেই। সবগুলো ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে অনুসন্ধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ জানার পর যদি দেখা যায়; এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাব্যবস্থায় গাফিলতি রয়েছে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা