অগ্রগতির নতুন নিদর্শন
- ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় আরেকটি মাইলফলক উন্মোচিত হলো গত শনিবার। সেদিন ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ এক ঘণ্টায় অতিক্রম করেছে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন। বিশ্ব যখন বুলেট ট্রেনে ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছে তখন আমরা গড়ে শত কিলোমিটার গতি অর্জন করছি। বিশ্বমানের বিচারে এটি খুবই নগণ্য হলেও বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় নেহাত ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পরীক্ষামূলক এই ট্রেনের যাত্রা নিয়ে আশপাশ এলাকার মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। কারণ আগে ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর রাজবাড়ী হয়ে যশোর যেতে সময় লাগত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আসন্ন ঈদের পর নতুন রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলে সময় বাঁচবে তিন থেকে চার ঘণ্টা। নিঃসন্দেহে এটি এক বড় অগ্রগতি।
বর্তমান সরকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। রেলওয়ে খাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট চালু করা এই বর্তমান পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্প তার প্রমাণ। এ ছাড়াও বিপুল অর্থ ব্যয়ে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে রেলের।
কিন্তু রেল হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান যার থলেয় আছে কালো বিড়াল। লাখো কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও গত ৫০ বছরে রেলের সেবার মান বাড়ানো যায়নি; বরং এটি দেশের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হয়ে আছে। প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে যে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেটি পুরো উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, যেমন করেছে সরকারের অন্য সব মেগা প্রকল্প। সেটি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা অন্য যেকোনো প্রকল্পই হোক না কেন। ফলে সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকছে না। এমনকি এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠছে এবং তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো রকম ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত দেখা যায় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দেয়া সরকারের এই নীতি জনমনে সংশয়ের উদ্রেক করে।
শুধু রেলের বিষয়ে লক্ষ করলেও দেখা যাবে, প্রতিষ্ঠানটির যাত্রীসেবার মান ভয়াবহ রকমের বাজে। স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও রেলের পরিধি সে তুলনায় খুব একটা বাড়েনি। বাড়েনি যাত্রীসেবাও। কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়া বাকি সব ট্রেনের কোনো মান নেই। ট্রেনগুলো অপরিচ্ছন্ন, আসন ছেঁড়া ও ছারপোকায় ভরা, ফ্যান চলে না, জানালার অনেকটাই ঠিক নেই, টয়লেটের অবস্থা শোচনীয়। টিকিট বিক্রি নিয়ে কেলেঙ্কারির খবর তো সবার জানা। ট্রেনে ওঠা-নামা থেকে শুরু করে ভেতরে নারী-শিশু-বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। বস্তুত, রেলের ক্ষেত্রে উন্নয়ন আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ সরকারের কাছেই এর প্রতিকার আশা করে। কিন্তু বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে মনোযোগী নয়।
রেলওয়ে হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান যেটি এক টাকা রোজগার করতে ব্যয় করে প্রায় তিন টাকা। সরকারের অন্য সব মেগা প্রকল্পের অবস্থাও ভিন্ন নয়। সব মিলিয়ে জনগণের অর্থে যেসব উন্নয়ন হচ্ছে তা ভবিষ্যতে কতটা টেকসই হবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা