২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দূষণে বছরে পৌনে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু

নির্মল পরিবেশ সৃষ্টিতে নজর দিন

-

আমাদের দেশে পরিবেশদূষণ কতটা ভয়াবহ, শুধু বায়ুদূষণের নমুনা থেকেই তা বোঝা যায়। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে তৃতীয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার বায়ুর মান ছিল অস্বাস্থ্যকর। অথচ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢাকার দূষণের অন্যতম উৎস যানবাহনের চলাচল ছিল কম, কলকারখানাও বেশির ভাগ ছিল বন্ধ। ২০২৩ সালে বিশ্বের বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বায়ুদূষণে গত বছর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর ঢাকা ছিল বিশ্বে দ্বিতীয় সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর। এ দিকে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বায়ুদূষণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। যা তুলনামূলক বেশি ক্ষতি করছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম শিশু, বয়স্ক ও নারীদের। দেশে বছরে দূষণে মারা যায় দুই লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষ।

বিশ্বব্যাংক বলছে, পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭.৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮.৩২ শতাংশের সমপরিমাণ। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ীÑ বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসাদূষণ বছরে দুই লাখ ৭২ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় দুই কোটি পয়েন্ট।
গৃহস্থালিতে কাঠ বা কয়লা দিয়ে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। শিল্পবর্জ্য এবং প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য ও অন্যান্য উৎস থেকে আসা বর্জ্যে দেশের নদীর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসাদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতি বছর এক লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মৃত্যু কমাতে পারে। শিল্প-কারখানার দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে।
পরিবেশগত ব্যবস্থাপনায় সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে পরিবেশগত অগ্রাধিকারগুলো চিহ্নিত করা দরকার। অগ্রাধিকার নির্ধারণ, পরিবেশ নীতি-পদ্ধতিগুলোর বৈচিত্র্য ও জোরদারকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করা এবং সবুজ অর্থায়নে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা করা যেতে পারে।
সর্বোপরি পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হয় না। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করা যায় না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমে পরিবেশদূষণের ধারা পাল্টানো সম্ভব। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে দূষণ কমানো অসম্ভব নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement