উন্নতির ফানুস থমকে আছে
- ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিসংখ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। জনসাধারণের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে এটি বেশ কার্যকর। একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে নাগরিকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এর উত্তম ব্যবহার হয়। অন্যদিকে জবরদস্তিমূলক শাসনে এর ব্যবহার হয় ক্ষমতাসীনদের সুবিধায়। তারা এটিকে ব্যবহার করেন একটি অস্ত্র হিসেবে। একে বানান প্রপাগান্ডার বাহন। আমাদের দেশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিগত এক যুগে এর কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানত রাজনৈতিক ব্যবহার ও অপেশাদারিত্বের বহু নজির সংস্থাটির কাজে পাওয়া গেছে। বিশেষত অর্থনৈতিক সূচকগুলো ফুলানো ফাঁপানো এবং সামাজিক অগ্রগতি বাড়িয়ে দেখানোর কসরত দেখা গেছে। বিবিএস সামাজিক অগ্রগতির তথ্য-উপাত্ত প্রতি বছর তুলে ধরে। এবার প্রকাশিত এমন সূচকে বহু চেষ্টার পরও যেন ভালো কিছু দেখানো গেল না।
ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস নামে প্রকাশিত ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আর্থসামাজিক উন্নতির স্রোত নি¤œগামী। বিবিএসের ২০২২ সালের রিপোর্টে হাজারে শিশুমৃত্যু ২৫ জন, ২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ২৭ জন। পাঁচ বছর আগে এটি ছিল হাজারে ২১ জন। এক মাসের কম বয়সী নবজাতকের মৃত্যুহার হাজারে ২০ জন, আগের বছর ছিল ১৬ জন। শিশুমৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন সেবা ও প্রসবোত্তর সেবা ঠিকভাবে চলছে না বলে অনুমান করা যায়।
গড় আয়ু আগের বছরে ছিল ৭২ দশমিক ৪, ২৩ সালে কমে ৭২ দশমিক ৩ হয়েছে। স্থূল মৃত্যুহার আগের বছরের ৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে এ বছর হয়েছে ৬ দশমিক ১। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সুবিধা সঙ্কুুচিত হওয়ার ইঙ্গিত এর মাধ্যমে বোঝা যায়। দেশের কিছু অঞ্চল অর্থনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বেশি পশ্চাৎপদ। এসব অঞ্চলের মানুষের দেখা মিলছে শহরের বস্তিতে। বস্তির ১৩ শতাংশ বাসিন্দা বরিশালের। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা ও নেত্রকোনা জেলার লোকজন বেশি বাস করেন বস্তিতে। এ পাঁচটি জেলার লোকেরা বস্তির জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ।
দেখানো হয়েছে, দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। এখন প্রতি চারজনে তিনজন মোবাইল ব্যবহার করেন। জনসংখ্যার অনুপাতে ৭৪ শতাংশের কিছু বেশি। ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার অর্ধেক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ৪৮ শতাংশের নগদ, বিকাশ ও রকেটের মতো আর্থিক সেবার হিসাব রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স সর্বশেষ ২০২৩ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান দেখা যায় তালিকার একেবারে নিচের দিকে। এমনকি সেটি গড়ের চেয়ে বেশ নিচে। সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৬১ দশমিক ১। সব দেশে মিলিয়ে গড় স্কোর ৭২ দশমিক ৮। এ অঞ্চলের কাছাকাছি অর্থনীতির দেশ এমনকি আরো পশ্চাৎপদ অর্থনীতির দেশের চেয়ে আইটি সুুবিধায় পিছিয়ে আমরা।
বিবিএসের আদমশুমারি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছিল। প্রথম এটি চালাতে গিয়ে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। বহু মানুষ দাবি করেছেন, জরিপকারীরা তাদের কাছে যাননি। শুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে প্রবণতা তার সাথে মোট সংখ্যা খাপ খায় না। এদিকে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে দেখাতে জনসংখ্যা পরিকল্পিতভাবে কম দেখানো হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাড়েনি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে; তাও আশাপ্রদ নয়। এটি প্রণয়নে বিবিএস জাতীয় জরিপের আগের নীতিতে চললে বলতে হবে দেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থা আরো খারাপ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা