এ দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে পড়–ক সর্বত্র
- ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
দৈনিক নয়া দিগন্তের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, ‘সয়াল্যান্ড’ খ্যাত লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করেছেন কৃষক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
এ বছর লক্ষ্মীপুরে ৪২ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এবার মৌসুমে তেলবীজটির উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৮০ হাজার ৭৯৮ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের পরিমাণ এই পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টরা। কৃষকরা বলছেন, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসলহানি ঘটে থাকে। তবে ২০২২-২৩ বিপণন বছরে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের ভালো ফলন এসেছে। বিগত মৌসুমে এর ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এবারো সয়াবিন আবাদে আগ্রহী হয়েছেন এখানে চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ বিপণন বছরে ৪১ হাজার ৬০০ হেক্টরে ৮৩ হাজার ২০০ টন সয়াবিন উৎপন্ন হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে এর উৎপাদন ছিল ৭২ হাজার ২০০ টন। সরকারের কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৫ ও ৬, বিনা-৫ ও ৬ জাতের সয়াবিন চাষে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। বিদায়ী মৌসুমে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য করেছেন সয়াবিন-চাষিরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তেলবীজটির উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কাজ করছে।
তথ্য মতে, বছরে দুইবার সয়াবিন উৎপাদন করেন লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট চাষিরা। প্রথমবার আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সয়াবিন বীজ আবাদ করা হয়, যা খরিপ-২ মৌসুম নামে পরিচিত। দ্বিতীয়বার, পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে মাঘ মাসের শুরুর দিকে রবিশস্য হিসেবে সয়াবিনের আবাদ করেন। এখানে উৎপাদিত সয়াবিন বীজসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। রায়পুরে টুনুর চর, চর ঘাষিয়া, চর কাচিয়া, কানিবগার চরে সয়াবিন বীজ উৎপাদন করা হয়। উন্নতমানের হওয়ায় অন্যান্য জেলার কৃষকরাও বীজ কিনতে এখানে আসেন।
‘খরিপ-২’ মৌসুমে প্রায় চার হাজার টন সয়াবিন বীজ উৎপাদন করা হয়, যার টনপ্রতি মূল্য দুই লাখ টাকা। এ হিসাবে চার হাজার টন বীজে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। রবি মৌসুমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়। এ মৌসুমে প্রতি মণে সাধারণত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পান কৃষকরা। জেলায় সয়াবিন ব্যবসায় লেনদেন হয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
কমলনগর হাজিরহাট এলাকার সয়াবিন চাষি নূরউদ্দিন বলেন, ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ সংস্থার সহায়তায় ‘নারিশ’, ‘আফতাব’ ও ‘এগ্রিগেট’সহ বিভিন্ন ফিডস মিল কোম্পানি ক্ষেত থেকেই সয়াবিন আগাম কিনে নেয়। এ কারণে আমরা এর ভালো দাম পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কয়েকজন গবেষক মাঠপর্যায়ে উন্নত জাতের বিইউ-২, ৩, ৪ জাতের সয়াবিন বীজ বিনামূল্যেই সরবরাহ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি জানান, ধান কাটার পরপরই সয়াবিন চাষের জন্য ক্ষেত তৈরি করবেন। তারা সব প্রস্তুতি নিয়েছেন এ জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ রেজাউল করিম ভূঞা বলেন, লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলায় বেশি সয়াবিন আবাদ করা হয়। জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু সয়াবিন উৎপাদনে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. খালেদ কমলনগর উপজেলায় কিছু নতুন জাতের ‘সয়াবিন ট্রায়েল ফলক’ বসিয়েছেন। ফলক পানিসহিষ্ণু বলে সফল হলে সয়াবিন আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
১৯৮২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করে মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি)। উৎপাদন উপযোগী উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় প্রথমবারেই এতে সাফল্য আসে। দেশে সয়াবিনের ৮০ শতাংশই আসে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেই। উৎপাদিত সয়াবিন পোলট্রি খাদ্য, ফিশফিড, সয়ানাগেট, সয়াবিস্কুট, সয়ামিট, সাবান, সয়াদুধ, শিশুখাদ্যসহ ৬১ ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
এটি শুভ সংবাদ। দৃষ্টান্তটি সর্বত্র ছড়িয়ে যাক। এটিই আমরা চাই। তা হলে গোটা দেশে ‘সয়াল্যান্ড’ গড়ে উঠবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা