২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মানুষ হত্যা

দুর্বিষহ মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছে

-

নারায়ণগঞ্জ ছোট একটি জেলা হলেও নানা কারণে আলোচিত। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র হওয়ায় পুরোনো কাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে জড়ো হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। ঢাকার পার্শ্ববর্তী হওয়ায় এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে এর জনঘনত্ব অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি। ৬৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় ৩১ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ডাকাতি মাদক চোরাকারবারির রমরমা কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে। জেলার রাজনৈতিক সন্ত্রাস এতে বাড়তি অস্থিরতা যোগ করেছে। অপর দিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ। অপরাধ দমনের চেয়েও তাদের সাথে অপরাধীদের যোগসাজশের খবর বেশি পাওয়া যায়।
অহরহ সংঘটিত বহুমাত্রিক অপরাধের প্রতিকার পায় না এলাকাবাসী। গুম খুনের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায় এখানে। রোববার দিবাগত রাতে জেলার সোনারগাঁয়ে গণপিটুনি দিয়ে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার বাঘরি বিল এলাকার লোকেরা জড়ো হয়ে ডাকাত সন্দেহে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায়। এর কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, উপর্যুপরি সেখানে চুরি ডাকাতিতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। রাতে হাফপ্যান্ট পরা লোকদের ডাকাত দল সন্দেহে আশপাশের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ লোকেরা তাদের ওপর চড়াও হয়। নিহত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকার কথা জানা গেছে। একজনের বিরুদ্ধে ডাকাতি অস্ত্রসহ ১০টি, দ্বিতীয়জনের বিরুদ্ধে ডাকাতি অস্ত্রসহ তিনটি এবং তৃতীয়জনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা রয়েছে।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। বাস্তবতা হচ্ছে ওইসব এলাকার লোকেরা চুরি ডাকাতিতে অতিষ্ঠ। নিহত একজনের বিরুদ্ধে পুলিশের বাড়ি ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং তাতে সে জামিনও পেয়েছে। জাতীয় পত্রিকার ভাষ্যে জানা যাচ্ছে, ওইসব এলাকার মানুষের এত দুর্দিন যাচ্ছে, তারওপর নানামাত্রার অপরাধী চক্রের দ্বারা শোষিত হচ্ছে। কোনো প্রতিকার তাদের মিলছে না। দুটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাকাতি প্রতিরোধে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। গত এক মাসে উপজেলায় ১১টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী পাহারা বসিয়েও ডাকাতি ঠেকাতে পারছে না। ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্শ্ববর্তী আড়াইহাজার উপজেলায় ১০ দিনে আটটি ডাকাতি সংঘটিত হয়। ২০১৫ সালে এই উপজেলায় গণপিটুনিতে আটজন নিহত হয়। বাঘরি বিল সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতির অভিযোগে গণপিটুনিতে ২০১৬ সালে আরো একজন প্রাণ হারায়। নারায়ণগঞ্জে অন্যান্য অপরাধের সাথে বর্ধিত হারে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটছে। গণপিটুনির বহু ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটছে।
স্থানীয় রাজনীতিসচেতন অনেকে মনে করছেন, জনমানুষের এমন চরম আচরণ প্রদর্শনের পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। অল্প কিছু মানুষ ছাড়া বাকিরা শোষণের শিকার হচ্ছে। এমনকি সেটা তারা প্রকাশ করার সুযোগও পাচ্ছে না। সমাজে অর্থনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করছে। এ অবস্থায় একজন অপরাধীর যে বিচার হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং মানুষ দেখতে পাচ্ছে, অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা শক্তি প্রদর্শন করছে। জিম্মি করে জমিজমা দখল করে নিচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। খুন হত্যা, এই এলাকার একটি সাধারণ নিয়ম। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে চরম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের মাধ্যমে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অর্থনৈতিক সাম্যের ঘাটতি সারা দেশে প্রকট আকার ধারণ করেছে। যেকোনো জায়গায় মানুষ এভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে নিষ্ঠুরতা ঘটাতে পারে। আমরা মনে করি, মানুষ যত কষ্টের মধ্যেই থাকুক, তারা যেন নিজেরা আইন হাতে তুলে না নেয়। অপরাধীদের কেবল সঠিক বিচারব্যবস্থার আওতায় শাস্তি দেয়াই কাম্য।


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ গুমের ঘটনা তদন্তে কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি : কমিশন প্রধান দায়মুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশেষ তদারকি শুরু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস ও অভিজ্ঞতা আমার আছে ইমরানের দলের বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদ লকডাউন ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল