‘শিক্ষা সবার জন্য নমুনা!’
- ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
দৈনিক নয়া দিগন্তের পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, আমেনা ছয় সন্তানের জননী। শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ না পেলেও ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল। গ্রামে স্কুল না থাকায় ছেলে-মেয়েদেরকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। তিন ছেলে আর তিন মেয়ে নিরক্ষর। বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালী। রাঙ্গাবালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কাশেম চরের বাসিন্দা আমেনা বেগম। স্বামী আজাদ জেলে। সাগরের মোহনায় জাল ফেলে যা পান, তা দিয়েই চলে সংসার। চরে স্কুল না থাকায় আমেনা সন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। মেয়ে আইরিন, আলভী ও মনিকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রাফিক গার্মেন্টসে চাকরি করে। ছেলে শাকিল ও শাহিন বাবার সাথে মাছ ধরায় ব্যস্ত। ‘লেখাপড়া শিখতে পারি নাই, সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর আশা ছিল।’ স্কুল না থাকায় ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে না পারায় আক্ষেপ। ওই চরের বসবাসকারী সব পরিবারেই এই আক্ষেপ রয়েছে। চরে ৬০০ লোকের বাস থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ছেলেমেয়েরা নিরক্ষর।
চরের বাসিন্দা রফিক সরদার জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। গ্রামে স্কুল না থাকায় ছেলে-মেয়েকে শিক্ষার সুযোগ দিতে পারেননি। ছেলেরা তার সাথে নদীতে মাছ ধরে আয়ে সহযোগিতা করছে। রেজাউল হাওলাদারের তিন ছেলে। এদের মধ্যে দুই ছেলেকে শিক্ষিত করতে না পারলেও ছোট ছেলে দ্বীন ইসলামকে অন্য চরের প্রাইমারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। এখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। নদী পার হয়েই পাঁচ কিলোমিটার দূরের স্কুলটিতে যেতে হয় ইসলামকে। তাই নিয়মিত যেতে পারে না। বর্ষা মৌসুম এলে খেয়া চলাচল বন্ধ থাকায় বছরের প্রায় ছয় মাস স্কুলে যাওয়া হয় না দ্বীন ইসলামের। রেজাউলেরও আক্ষেপ চরে স্কুল থাকলে সব ছেলে-মেয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেত। তিনি জানান, সরকারের প্রকল্পের মাধ্যমে রঙিন টিনের ঘর পেয়েছেন। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া শিখানোর স্বপ্ন রঙিন হয়নি।
গ্রামের বাসিন্দা নূর হোসেন জানান, এই চরে প্রায় ৭০০ লোকের বসবাস। ৬০ পরিবারকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের রঙিন টিনের ঘর দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘর পেয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। ‘এই চরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হলে সন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে পারতাম।’ এই চরের দু’চারজন শিশু অন্য চরে লেখাপড়া করছে। তারা না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তিনি বলেন, এই চরের শতাধিক স্কুলে গমনোপযোগী শিশু রয়েছে। অবিলম্বে এই চরে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, ‘চর কাশেম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। অফিস থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে। নতুন স্কুল করার ব্যাপারে সরকারের বিধিমালা আছে। পর্যায়ক্রমে কাজটি সম্পন্ন হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন জানান, ‘আমরা উপজেলা থেকে ওই চরে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। উপজেলা থেকে চরটি বিচ্ছিন্ন থাকায় শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে সর্বশেষ আপডেট জানাব।’
‘সবার জন্য শিক্ষা’ কর্মসূচির এই দশা হলে এর রূপায়ণ অসম্ভব। তাই কর্তৃপক্ষের এদিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা