সংখ্যাগরিষ্ঠরা শোষিত বঞ্চিত
- ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। সম্পদের বণ্টন এমনভাবে হবে সবাই কিছু না কিছু পাবে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা থেকে রেহাই পাবে মানুষ। ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না’-এই ছিল মূলমন্ত্র। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটেছে এর সম্পূর্ণ উল্টোটা। ক্রমে দরিদ্রদের সম্পদ চলে যাচ্ছে ধনীদের উদরে। বিস্ময়কর হলো করোনা মহামারী থেকে বর্তমান এই দুঃসময়ে সবাই যখন দুঃসহ অর্থনৈতিক অবস্থার চাপে কাবু তখন মুষ্টিমেয় ধনীদের অর্থ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪৩ শতাংশ কোটিপতিদের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুরো ব্যাংকব্যবস্থায় আমানত অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ৬০ লাখ। সব মিলিয়ে এতে জমা অর্থের পরিমাণ ১৭ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮ জন কোটিপতির অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে সাত লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। সম্পদ কিভাবে বাংলাদেশে নিচে থেকে উপরের দিকে পুঞ্জীভূত হচ্ছে ব্যাংকে থাকা আমানত এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
এক থেকে পাঁচ কোটি টাকা আছে এমন অ্যাকাউন্ট ৯২ হাজার ৫১৬টি। পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা আছে ১২ হাজার ৬৫২ অ্যাকাউন্টে। ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা এক হাজার ৩৪৫ অ্যাকাউন্টে। ৫০ কোটি টাকার বেশি এক হাজার ৮১২ জনের অ্যাকাউন্টে। শেষোক্ত ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টে আমানত আছে দুই লাখ ৫৩ হাজার সাত কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ১৪ শতাংশ। ধনী-গরিবের বৈষম্য আমরা অনুধাবন করতে পারব সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের অঙ্ক থেকে। পাঁচ হাজার টাকার কম আমানত রয়েছে ১১ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৬টি অ্যাকাউন্টে। প্রান্তিক গোষ্ঠী যে আরো নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে নিচের দিকে আমানতকারীদের জমা অর্থ কমে যাওয়া তার ইঙ্গিত দেয়। ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকা লোকদের মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে আমানত পাঁচ হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছে এমন অ্যাকাউন্ট ছয় হাজার। বিগত এক দশকের পূর্ণ চিত্র পাওয়া গেলে এটি নিশ্চিতভাবে জানা যাবে, উপরতলার লোকদের আমানত বেড়ে কমে গেছে নিচের দিকের লোকদের আমানত। ২০০৬ সালে এ দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল আট হাজার ৮৮৭ জন। ২০২০ সালে হয় ৯৩ হাজার ৮৯০ জন। করোনার মৌসুমে ২০২১ সালে হয়ে যায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬ জন। বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, এ সময়ে মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ, অথচ ঠিক সেই সময়ে দেশে আরো সাত হাজার কোটিপতি বেড়েছে। ওই সময় সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা অর্থ ৫৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এমনকি মহামারীর ১৮ মাসে দুবাইয়ের রিয়েল-এস্টেট ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশী নাগরিকরা। বাংলাদেশের ধনিক শ্রেণী কতটা বাড়ন্ত বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি চার্ট সেটি স্মরণ করিয়ে দেয়। বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভার ও মার্সিডিজ গাড়ি বানের পানির মতো দেশে ঢুকছে। ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর পরও এর আমদানি তিনগুণ বেড়ে গেছে।
মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের সঙ্কট বাড়ছে। চার দিকে বিভিন্ন বাজিকরের শোষণের শিকার হচ্ছে তারা। প্রতিনিয়ত তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। সেই টাকায় বিলাসিতা করছে মুষ্টিমেয় একটি শ্রেণী। এ অনাচার থামানো না গেলে এদেশ পুরোপুরি একটি উপনিবেশে পরিণত হবে। শাসকশ্রেণীর আশকারায় ধনিক শ্রেণী সবাইকে চিবিয়ে খাবে। এ অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তির কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা