গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজের প্রত্যাশা
- ১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অবিস্মরণীয়। এমন একটি সময়ে তিনি জন্মেছিলেন যখন বঞ্চনা, বর্ণভেদ ও সাম্প্রদায়িকতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসেছিল। ইংরেজরা ধর্মীয় ইস্যু ব্যবহার করে বিভেদের মাধ্যমে তাদের শাসনের শিকড় সমাজের গভীরে প্রোথিত করে। এর সুযোগ নিয়েছে একশ্রেণীর জমিদার ও তাদের দোসররা। তাদের আনুকূল্যে বেড়ে ওঠে একটি পরজীবী শ্রেণী। এ প্রেক্ষাপটে বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কখনো দ্বিধা করেননি শেখ মুজিবুর রহমান। মানুষের অধিকার আদায়ে নিবেদিতপ্রাণ মুজিব শৈশবে প্রখর রাজনৈতিক-সচেতনতা অর্জন করেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এ বৈশিষ্ট্য পরবর্তীকালে জাতির মুক্তিসংগ্রামকে প্রভাবিত করে। ব্রিটিশ আমলের পাকিস্তান আন্দোলন থেকে প্রাপ্ত চেতনা পরে ওই দেশের শাসকদের চাপিয়ে দেয়া শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে ঝলসে ওঠে তার সাহসী নেতৃত্বে।
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায়। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান দেওয়ানি আদালতে চাকরি করতেন। আদালতে বাবার নিত্য আসা-যাওয়া বিচার-বঞ্চনার ব্যাপারে তার সংবেদনশীল মনকে প্রভাবিত করে। একটি মামলা আদালতে পৌঁছানোর আগে পুলিশি ব্যবস্থায় কিভাবে সাধারণ মানুষ জমিদার-জোতদারসহ সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের দ্বারা নির্যাতিত-অপমানিত হতেন তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেন। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এর উজ্জ্বল দলিল। পিতার কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এ দেশে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না। এমন চেতনার মূল কারণ বঞ্চনার প্রতিক্রিয়া, যাকে সাম্প্রদায়িকতা বলে খাটো করার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রথম ১৯৩৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে কারাবরণ করেন। তার অপরাধ ছিল হিন্দু-মুসলমান যুবকদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে তিনি মুসলমানদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এ বিভাজন ও বিরোধ ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হলেও মূল কারণ ছিল বঞ্চনা। দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় অল্প বয়সে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন মুজিব। এরপর সংগ্রামের পথে নিরন্তর এগিয়ে একসময়ে হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের অবিসংবাদিত নেতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে তার নির্দেশ মুখ্য হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশ।
আজো রয়েছে এ নেতার রাজনৈতিক জীবনের অতুলনীয় পথনকশা, যার মূলকথা বঞ্চিতদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমরা যতটা ঘটা করে তার জন্ম দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতা করছি, নেতৃত্বের যেসব ইতিবাচক দিক তিনি দেখিয়ে গেছেন, তা অনুসরণে ততটাই যেন অনাগ্রহী। আজ বাংলাদেশে চরম অসহিষ্ণুতা বিরাজ করছে, ক্ষমতার অধিকারীরা তাদের মতের বাইরের মানুষদের কোনো পর্যায়ে ছাড় দিচ্ছেন না। এমন প্রবণতা বঙ্গবন্ধু কখনো প্রদর্শন করেননি। শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন দেখা শেখ মুজিবের নামে তার দল নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে এমন শাসন; যেখানে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অনেকটা সীমিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সবাই আবার একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উত্তরণের আশা কি করতে পারি না? বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়ে তার দল এ লক্ষ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা