২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গণপরিবহন যাত্রীবান্ধব হওয়ার অন্তরায়

সরকারদলীয় লোকদের আধিপত্য

-

গণপরিবহন, বিশেষ করে বাস সার্ভিস সাধারণ মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম। কিন্তু এ খাতে এখনো শৃঙ্খলা আনা যায়নি। আসলে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কার্যকর কোনো উদ্যোগ কখনো নেয়া হয়নি। এর অন্যতম কারণ, সরকারের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা। গত ১৫ বছরে এ খাতে বিশৃঙ্খলা চরমে উঠেছে, জনদুর্ভোগ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।
গণপরিবহন জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও সরকারদলীয় লোকজনের আধিপত্যে খাতটি যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠতে পারছে না। বাস্তবে এটি পণবন্দী হয়ে পড়েছে সরকার-সমর্থক মালিক-শ্রমিক সংগঠনের কাছে। এ বন্দিদশার সুযোগ নিয়ে দুষ্টচক্র অনৈতিক সুবিধা ভোগ করছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাস কোম্পানিগুলোর প্রায় ৯২ শতাংশের মালিক ও পরিচালনা পর্ষদের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার ৮০ শতাংশ ক্ষমতাসীন দল ও বাকি ১২ শতাংশ অন্যান্য দলের। সংস্থাটি বলছে, বছরে প্রায় এক হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ হিসেবে দিতে বাধ্য হন বাসমালিক ও শ্রমিকরা। এর মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা দলীয় পরিচয়ে সড়কে চাঁদাবাজি হয়।
টিআইবির গবেষণার তথ্য, রাজনৈতিক সমাবেশ, বিভিন্ন দিবস পালন, টার্মিনালের বাইরে (রাস্তায়) পার্কিং এবং সড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও টোকেন বাণিজ্যের জন্য বাসমালিক ও কর্মী-শ্রমিকরা চাঁদা বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ হলো নিবন্ধন ও সনদগ্রহণ এবং হালনাগাদকরণ বাবদ ঘুষ। বাসমালিক-শ্রমিকদের বিআরটিএকে বছরে ঘুষ দিতে হয় ৯০০ কোটি টাকার বেশি।
বাস পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির কেন্দ্রে রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থনপুষ্টদের পরিবহন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। মালিক সংগঠনের নেতাদের বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। প্রকৃত বাস্তবতায়, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনে একচেটিয়া ক্ষমতা চর্চার পাশাপাশি নীতি করায়ত্ত করার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে খাতটিকে পণবন্দী করে রেখেছেন।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় বলীয়ান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের আঁতাত। তিনি বলেন, বাস পরিবহন ব্যবসায় বিভিন্ন আঙ্গিকে চাঁদাবাজি ও অবৈধ লেনদেনের ঘটনা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, হাইওয়ে পুলিশ, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের যোগসাজশ রয়েছে। বিআরটিএ নির্ধারিত ভূমিকা পালনে স্পষ্টত ব্যর্থ হয়েছে।
গণপরিবহন খাতের বন্দিদশা এত প্রকট যে, মালিক-শ্রমিকদের আঁতাতে তাদের আচরণ অবস্থাদৃষ্টে সরকারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হিসেবে মনে হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে সরকার নিজের প্রণীত আইন ও নিয়মনীতি বাস্তবায়নেও সফল হচ্ছে না। তাই প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। একই সাথে এ খাতের সাধারণ শ্রমিকরাও তাদের মৌলিক অধিকারসহ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং যাত্রীবান্ধব হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে এ খাতে সরকারদলীয় লোকজনের জেঁকে বসা আধিপত্য।


আরো সংবাদ



premium cement
হারেৎসের ওপর ইসরাইল সরকারের নিষেধাজ্ঞা, সকল সম্পর্ক ছিন্ন নিজ্জর-হত্যায় অভিযুক্ত ৪ ভারতীয়ের বিচার শুরু কানাডায় ফলোঅন এড়ালেও ভালো নেই বাংলাদেশ আইপিএল নিলামের প্রথম দিনে ব্যয় ৪৬৭.৯৫ কোটি রুপি : কে কোন দলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে ট্রাম্প 'ভীষণ চিন্তিত' নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

সকল