প্রাণবৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব
- ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে পশুর নদসহ আটটি নদী দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে শত শত দেশী-বিদেশী জাহাজ। এসব নদ-নদীতে গড়ে প্রতিদিন চলে ৩৪৫টি করে জাহাজ। জাহাজ চলাচলের বিরূপ প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যে। পরিবেশ-প্রতিবেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাহাজ চলাচলে পানির নিচে যে শব্দদূষণ হয়, তাতে ডলফিন, কুমিরসহ জলজপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সাথে জাহাজের ঢেউয়ে বনের ভূমি ক্ষয়ে যাচ্ছে। গাছপালা পানিতে পড়ে যাচ্ছে। খালগুলো প্রশস্ত হয়ে পড়ছে। ফলে জাহাজ চলাচলের বিরূপ প্রভাব পড়ছে নদী, মাটি, গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর ওপর। সহযোগী একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগর থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত সুন্দরবনের মধ্যে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পশুর নদ বয়ে গেছে। বনের ভেতরে প্রবাহিত এ নদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চলাচল করে দেশী-বিদেশী ২২৫টি জাহাজ। অন্য সাতটি নদীতে প্রতিদিন চলাচল করে ১২০টি। এ দু’টি নৌপথে জাহাজে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার, ফ্লাইঅ্যাশ, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, পাথর, এলপি গ্যাস, খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন করা হয়।
পরিবেশ-বিজ্ঞানীদের মতে, জাহাজগুলো থেকে নিঃসৃত তেল ও অন্যান্য বর্জ্য বনের পানি ও মাটির দূষণ ঘটে। জাহাজ চলাচলে সৃষ্ট ঢেউয়ে তীর ভেঙে পলি পড়ে নদীর নাব্যতা কমে যায়। জাহাজের উচ্চ শব্দ এবং রাতে আলো বন্যপ্রাণীদের আতঙ্কিত করে তোলে। এর বিরূপ প্রভাবে বনের মধ্যে নদীর তীরে এখন আর আগের মতো বন্যপ্রাণী ও পাখির দেখা পাওয়া যায় না।
সুন্দরবনের মধ্যে নদীতে গত ৯ বছরে কয়লা, সার, ফার্নেস অয়েল, ক্লিংকার, ফ্লাইঅ্যাশসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অন্তত ২৬টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। জাহাজে থাকা ফার্নেস অয়েল, কয়লা, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার ও সø্যাগ, পাথর, সার প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে নদীর পানি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটিতে। কিন্তু বারবার ঘটা এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, দূষণ ঠেকানো কিংবা ডুবে যাওয়া জাহাজ দ্রুত উত্তোলনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল দৃশ্যমান।
লক্ষণীয়, বারবার জাহাজডুবিতে জাহাজে থাকা পণ্য ছড়িয়ে পড়ে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জলজপ্রাণীসহ পুরো জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জলজপ্রাণী মারা যায় এবং এদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। জলজ খাদ্যচক্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নদীর যে পানি দূষিত হয় তা জোয়ারে বনের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে চারা গজানো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাহাজ চলাচলে সুন্দরবনের ওপর পড়া ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনে বন বিভাগ কিংবা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কারো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। এমনকি বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী কোনো জাহাজও নেই।
এ কথা সত্যি যে, মংলা বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকায় সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে যেহেতু সুন্দরবন আমাদের দেশের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ, তাই এর ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে কিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা যায় সে দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। উদ্ভাবন করতে হবে টেকসই উপায়। সঙ্গত কারণে জরুরি হলো- সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদ-নদীতে জাহাজ চলাচলের কারণে বনের প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কতটা ভয়াবহ তা নিরূপণে ব্যাপকভিত্তিক জরিপ ও গবেষণা প্রয়োজন যাতে প্রতিকারের জন্য উদ্ভাবন করতে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কাজ হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কোনো গবেষণা হয়নি। ক্ষতি নিরসনে নেয়া হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। পরিণতিতে হুমকিতে পড়ছে গোটা বনের প্রাণবৈচিত্র্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা