জীবন-যাত্রার ব্যয় বাড়বে
- ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
বর্তমান সময়ে যেকোনো জ্বালানির দাম বাড়লে সরাসরি জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যায়। তবু সরকার বারবার অযৌক্তিকভাবে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করে নাগরিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। কারণ, জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর অর্থ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া। অথচ এমনিতে নিত্যপণ্য বর্তমানে উচ্চমূল্যে স্থির। যার প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনমান আগের চেয়ে নি¤œগামী। আবার যেকোনো ক্ষেত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের মতো জ্বালানির দাম বাড়ালে সাধারণের জীবন-যাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে।
এমন প্রেক্ষাপটে সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবারো বাড়াল সরকার। এবার প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৭৫ পয়সা। দাম বাড়ানোয় সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম হবে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা, যা আগে ছিল ১৪ টাকা। আর শিল্পে সরবরাহের ক্যাপটিভে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা। নতুন দাম চলতি ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এ দিকে আগামী মাস থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়ানো হবে। বিপিডিবির তথ্য, গত দেড় দশকে ১১ বার পাইকারি পর্যায়ে এবং ১৩ বার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রায় ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ফলে ক্যাপটিভ পাওয়ারগুলোতে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। নতুন করে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় আরো বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের দাম।
গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতে ভর্তুকি থেকে বের হওয়ার জন্য দাম সমন্বয় করা হবে’। তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে; উৎপাদন সক্ষমতা তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকও কাজে লাগছে না। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ভাড়া দেয়া হচ্ছে।
উচ্চ মূল্যের বিদ্যুৎ পরিহার করা গেলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতো না। পিডিবির লোকসান বাড়ত না। এসব অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কারণে পিডিবির লোকসানের ধকল সামলাতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। বাহুল্য ব্যয় কমানো গেলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি পিডিবির লোকসান হতো না। গ্রাহকের ঘাড়ে বাড়তি দামের বোঝা চাপাতে হতো না।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্যায্য ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের অনীহা দেখা গেছে। অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সরকারকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেটরদের বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এত উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যয় কমাতে নানা কৌশল সরকারকে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সরকার সে দিকে হাঁটছে বলে মনে হয় না। তা না হলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলা হতো না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, বিপুল টাকা কেন্দ্রভাড়া দিতে না হলে, কম খরচের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলে উৎপাদন ব্যয় এত বাড়ত না। মানুষ কম খরচে বিদ্যুৎ পেত। এতে নাগরিক জীবনে স্বস্তি বিরাজ করত। কিন্তু তা না করে সরকার গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় জনস্বার্থ উপেক্ষা করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা