জনসেবা প্রাধান্য পাক
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর একটি পুলিশ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। এ কারণে পুলিশের কাছে আইন কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। মূলত অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে এটি ব্যবহার হবে। উন্নত দেশে জনসেবক হিসেবে পুলিশের সুনাম রয়েছে। আমাদের দেশে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্যে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ কাজে তাদের প্রাণের ঝুঁকি নিতে হয়। তবে আমাদের দেশে পুলিশকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা বেশি। কিছু সংখ্যক পুলিশের অন্যায় অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি সরকার এই বাহিনীকে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য ব্যবহারের কারণে এমনটা হচ্ছে। দরকার হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর যে বিচ্যুতি রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো অপনোদনে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান।
শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ। এ উপলক্ষে পুলিশ বিভাগ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে এই বিভাগের জন্য আরো কতটা সুযোগ সুবিধা ও সম্মান বাড়িয়ে নেয়া যায় সেটা। তাদের জোরালো দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত পদোন্নতি প্রদান, সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের বিশেষ সময়ে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শকের ১৪০টি ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে পদ না থাকায় এদের এখনো পদায়ন করা যায়নি। সম্প্রতি ১৪ জনকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১০ জন সুপারনিউমারারি। বোঝা যাচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় উপরের দিকে অনেক বেশি পদোন্নতি পেয়েছে পুলিশ। সরকার তাদের কোথায় বসাবেন সেটা ঠিক করে উঠতে পারছে না।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় শ্রেণী থেকে এ ধরনের অধিক পদোন্নতি অব্যাহত রাখার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে। এছাড়া বিদেশী মিশনে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ বাড়ানো, ঝুঁকি ভাতা সর্বজনীন করা, সুদমুক্ত ঋণে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার দাবি জানানো হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে পুলিশ এই সরকারের আমলে অগ্রাধিকার পেয়েছে। এছাড়া এই সরকারের সময়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এসব বাহিনীর অনেকগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস ইউনিটসহ আরো কিছু বিশেষ বাহিনীর প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ ও অপরাধ তদন্তে গঠিত পিবিআইয়ের কথা বলা যায়। সড়কে পুলিশের চাঁদাবাজির বহু তথ্য প্রমাণ ইতোমধ্যে হাজির হয়েছে। পিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু স্পেশাল মামলা পরিচালনায় অসাধুতা অবলম্বনের শক্ত অভিযোগ সামনে এসেছে। বিশেষ বাহিনীগুলো জনগণের নিরাপত্তাকে জোরদার করে সেবাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গঠিত হলেও কিছু ক্ষেত্রে হচ্ছে উল্টো। এ অবস্থায় উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত দরকার। তা না হলে পুলিশের আরো নতুন বিভাগ খোলা কেবলমাত্র পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকারের দান মনে হতে পারে।
পুলিশের প্রধান দায়িত্ব অপরাধ প্রতিরোধ। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, পুলিশের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি এর সংখ্যা ও বিভাগও বাড়ানো হয়েছে। একই সময় আমরা দেখলাম, অপরাধও বেড়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আত্মসমালোচনা। নিজেদের অদক্ষতা অযোগ্যতা তলিয়ে দেখা। এই সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, অপরাধ দমনের চেয়েও পুলিশের বেশি ব্যবহার হয়েছে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে। সরকারের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, পুলিশকে তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে, তাই তাদের সুযোগ সুবিধাও বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। পুলিশের এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে নিজেদের সুবিধা বাড়িয়ে নেয়ার। সুযোগ সুবিধা চাওয়া সেভাবে দোষের কিছু নয়। তবে দায়িত্ব ও সুবিধা দুটো পাশাপাশি। আগে দায়িত্ব প্রমাণ করতে হয়। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে যেভাবে তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে মনে হচ্ছে, তারা কেবল দেশের পক্ষ থেকে সেবা ও সুবিধা নিতে চায়। যেখানে সর্বাগ্রে উচ্চারিত হওয়া দরকার জনসেবার কথা। আমরা মনে করি, একটি উচ্চমানের পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে হলে আমাদের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা