পুণ্যার্জনের অনুপম উপলক্ষ
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হিজরি বর্ষপঞ্জির ১৪ শাবান দিবাগত রাতটি বিশেষ পুণ্যময়। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা ‘শবেবরাত’ বা ভাগ্যরজনী হিসেবে পালন করেন। আজ দিন শেষে এ রজনী আবারো ঐতিহ্যবাদী মুসলমানের সামনে পুণ্য অর্জনের বিরাট সুযোগ নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। এ রাত মুসলমানরা বিভিন্ন নামে পালন করে থাকেন।
হজরত আলী রা:-এর বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনীর আগমন ঘটে, তখন রাতে কিয়াম করো (দাঁড়িয়ে ইবাদত করো), আর দিনে রোজা রাখো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ জ্যোতি বর্ষণ করেন এবং বলেন- আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছ কি? তাকে ক্ষমা করে দেবো। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী? তাকে জীবিকা দান করব। কেউ কি আছ বিপদগ্রস্ত? তাকে আমি বিপদ থেকে মুক্তি প্রদান করব। কেউ কি এমন আছ?’ এভাবে, সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের আহ্বান জানাতে থাকেন।
কোনো কোনো আলেমের অভিমত, কুরআনুল কারিমে বরকতময় রজনী বা ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ হিসেবে শবেবরাতের উল্লেখ রয়েছে। হাদিসে শবেবরাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’; অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যরজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সূরা দুখানে আল্লাহ বলছেন- ‘আমরা এই কুরআনকে এক মহিমামণ্ডিত রাতে অবতীর্ণ করেছি। আমরা অবশ্যই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে ওই রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। আর নিশ্চিতভাবে আমিই প্রেরণকারী।’ এ আয়াতগুলোকে সাধারণত শবেকদর সংশ্লিষ্ট মনে করা হয়। তবে যারা আয়াতগুলোর অর্থকে সম্প্রসারিত করে শবেবরাতকে বুঝিয়ে থাকেন, তাদের বক্তব্য হলো- ‘মধ্য শাবানের এ রাতে পুরো কুরআন মাজিদ বাইতুল মামুর থেকে দুনিয়ার আসমানে এসেছিল। তারপর লাইলাতুল কদরের রাতে এর প্রথমাংশ নাজিল হয়েছিল। শবেকদর বা লাইলাতুল কদরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে প্রত্যেক প্রজ্ঞাময় বিষয় নির্ধারিত হয়।’ এভাবে এ দু’টি পবিত্র রজনীকে সম্পর্কিত করা হয়েছে।
শবেবরাতের উল্লেখ দেখা যায় ইমাম তিরমিজি বর্ণিত হাদিসেও। এতে বলা হয়েছে, এক রাতে মহানবী সা:-এর স্ত্রী হজরত আয়েশা রা: ঘুম থেকে জেগে গেলেন। কিন্তু নবী করিম সা:-কে বিছানায় দেখতে পেলেন না। বিবি আয়েশা রা: তাই তাঁকে খুঁজতে বের হলেন। তিনি নবী সা:-কে দেখতে পান গোরস্তানে। মুহাম্মদ সা: বললেন, ‘১৫ শাবান রাতে সর্বনিম্ন আকাশে আল্লাহ তায়ালা অবতরণ করেন এবং (আরবের) কালব গোত্রের ছাগলের গায়ের পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য মাফ করে দেন।’ উল্লেখ্য, তখন কালব গোত্রটি ছাগল পালনে সুপরিচিত ছিল এবং তাদের মালিকানায় থাকত অসংখ্য ছাগল। ইমাম তিরমিজি জানিয়েছেন, হজরত আবু বকর রা:-ও একই ধরনের হাদিস বর্ণনা করেছেন।
শবেবরাত সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে, কিছু ভুল আমলও অনেকে করেন এ উপলক্ষে। এসব থেকে বিরত থেকে সহিহ নিয়তে ও নিয়মে ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে শবেবরাত অতিবাহিত করা মুমিন হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য। আলোকসজ্জা, আতশবাজি, গোরস্তানে আগরবাতি, বিশেষ আইটেমের খাবার উপভোগ, ইত্যাদি অর্থহীন ও অপচয়মূলক কাজ বর্জন করা কল্যাণকর। শবেবরাত উপলক্ষে নামাজ-রোজার পাশাপাশি কায়মনোবাক্যে নিজ নিজ গুনাহর জন্য গাফুরুর রাহিমের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, শিরক, পরশ্রীকাতরতা, মা-বাবার অবাধ্যতা, আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ, ব্যভিচার, মদ্যপান বা নেশা করা প্রভৃতি কাজ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে না এ রাতেও। তাই বিশেষ করে, এসব জঘন্য অপকর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। পবিত্র রাতে সম্পূর্ণ পাকপবিত্র দেহমন নিয়ে নিজের, পরিবারের এবং বিশ্বমানবতার ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি এবং কল্যাণে মুনাজাত করতে হবে। আজ এ পবিত্র রাতে মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা