ভিন্ন নামে দাদন ব্যবসায়
- দরিদ্রদের বাঁচান
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০৫
উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় দাদন-ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে একটি শ্রেণী নিঃস্ব হচ্ছে- এমন খবর দিচ্ছে সহযোগী একটি দৈনিক। দরিদ্র ও নিম্নবিত্তকে শোষণের পুরোনো পন্থা এভাবে প্রকাশ্যে চললেও সেখানে সরকার ও প্রশাসনের সক্রিয় ব্যবস্থা নেই। দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের নিউকলোনির এক দরিদ্র পরিবারের করুণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। গৃহিণী আলিফা নূর করোনাকালে স্বামী অসুস্থ হলে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নেন। এ ঋণের জাল এত কঠিন যে, তিনি তা শোধ দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। নিজে ও পরিবার মামলার জালে ফেঁসে গেছেন।
দরিদ্র এ নারীর ঋণগ্রহণ সংক্রান্ত কেসটি পুরোনো দাদন ব্যবসার আধুনিক ধরন। আলিফা তার স্বামীর চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ে ২০২০ সালে যান স্থানীয় সাখাওয়াত হোসেনের কাছে। তিনি ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেন। এ সময় আলিফার কাছ থেকে তার স্বাক্ষরিত কৃষি ব্যাংকের দুটি ব্ল্যাংক চেক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া ৩০০ টাকার ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেন। এগুলো ছিল ঋণ ব্যবসার ফাঁদ, যা যথাসময়ে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। ২০২২ পর্যন্ত ধাপে ধাপে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন আলিফা। এতে সুদে আসলে ঋণ পরিশোধ হওয়া দূরে থাক, সাখাওয়াতের হিসাবে শুধু সুদ পরিশোধ হয়েছে। ওই নারীর কাছে তিনি চার লাখ টাকা দাবি করেন।
বিপদের সময় আলিফা আরো একজনের কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা ঋণ নেন। তিনিও একইভাবে ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করিয়ে নেন। আলিফার দাবি মতে, এ টাকাও তিনি সুদে আসলে পরিশোধ করেছেন। ঋণের নামে পুরোনো দাদন ব্যবসায়ীদের একটি চক্র ওই এলাকায় রয়েছে। অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় আলিফার বিরুদ্ধে চেক ও স্ট্যাম্পে ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে মামলা করে দেয় উভয় পক্ষ। এখন দরিদ্র আলিফার হয়রানির শেষ নেই। এভাবে কৃষক, দিনমজুর, দোকানদার, ভ্যানচালক, গাড়িচালক নিম্ন শ্রেণীর মানুষকে তারা টার্গেট বানায়। বিপদে তাদের ঋণ দিয়ে বেশ কয়েকগুণ অর্থ আদায় করে। চাহিদামতো অর্থ না পেলে ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এ কাজে সহযোগী হিসেবে জোটে অসাধু চক্র। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাতবর ও পুলিশের একটি অংশ এদের পক্ষ হয়ে কাজ করে। তাদের পক্ষে রয়েছে এক শ্রেণীর আইনজীবী।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে একটি শ্রেণী ভিন্ন ফরম্যাটে পুরোনো দাদন ব্যবসায় চালাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সুশাসনের বড়ই অভাব। তাই জালিয়াতি ধোঁকাবাজি করা সহজ। সময়টি দাদন ব্যবসায় চালানোর অনুকূল। এ অবস্থায় সারা দেশে এ ব্যবসায় ছড়িয়ে থাকা স্বাভাবিক। আঁচল ফাউন্ডেশনের সরবরাহ করা তথ্যমতে, ঋণে জর্জরিত হয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর আত্মহত্যা করা একটি লাশের পাশে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল, ‘সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গা-জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি।’
সুদূর অতীত থেকে অতি মোনাফার জন্য কুখ্যাত দাদন ব্যবসায়। একটি অসাধু শ্রেণী চড়া সুদে ঋণ দিতে এই ফন্দি ব্যবহার করছে। বহু মানুষ এর জাঁতাকলে নিঃশেষ হয়েছে। এ কারণে এটি নিষিদ্ধ। দুর্ভাগ্য হলো, ভিন্ন ফরম্যাটে এখনো এটি দেশে চালু রয়েছে। দেশে দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়ও এর মাধ্যমে শোষণের শিকার । এ ব্যাপারে সরকারের নজর দেয়া দরকার বৈকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা